আজকের বিএমএ জাতির পিতার স্বপ্নের বাস্তবায়িত রূপ : প্রধানমন্ত্রী
- আপডেট সময় : ০৮:২৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭৬ বার পড়া হয়েছে
২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, আজকের মেঘনা ডটকম, ডেস্ক রিপোর্ট : আজকের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অবকাঠামোগত, কৌশশগত এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত, স্বয়ংসম্পূর্ণ, চৌকস এবং পেশাগতভাবে দক্ষ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে ভাটিয়ারী বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭৭তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের প্রশিক্ষণ সমাপ্তি ও অফিসার ক্যাডেটদের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে সামরিক বাহিনীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম এবং অনস্বীকার্য। এ কারণেই একটি প্রশিক্ষিত, শক্তিশালী ও দক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কুমিল্লা সেনানিবাসে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির শুভ উদ্বোধন করেন; যা ছিল বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার ১৯৭৪ সালে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকেই সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য আমরা ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করেছি। এর আওতায় আমাদের সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নতুন নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। আমাদের সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ২০০০ সালে সর্বপ্রথম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে মহিলা অফিসার নিয়োগ এবং ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম মহিলা সৈনিক ভর্তির যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মহিলা কর্মকর্তাদের লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি প্রদান এবং কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুইজন মহিলা অফিসার কনটিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন।

প্রধানমন্ত্রী প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মিলিটারি একাডেমিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একাডেমিতে পরিণত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এখানে সকল প্রকার অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে এই একাডেমিতে বিভিন্ন বিষয়ে চার বছর মেয়াদি অনার্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি চালু করা হয়েছে। একইসঙ্গে ক্যাডেটদের কমিশন লাভের সময়কাল দুই বছর থেকে তিন বছরে উন্নীত করা হয়েছে। একটি প্রশিক্ষিত ও আধুনিক সেনাবাহিনী গঠনে এই উদ্যোগ যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে। উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান ও সুযোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে জাতির পিতা যে মিলিটারি একাডেমির স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারই সফল বাস্তবায়িত রূপ আজকের এই বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ)।
নবীন অফিসারদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনটি অত্যন্ত আনন্দের। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত অফিসার হিসেবে তোমরা আজ বৃহত্তর কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছ। আজকের এই শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তোমাদের ওপর ন্যস্ত হলো দেশ মাতৃকার, মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে পাসিং আউট ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আমি তোমাদের জাতির পিতা হিসাবে আদেশ দিচ্ছি, তোমরা সৎ পথে থেক, মাতৃভূমিকে ভালবাইসো। ন্যায়ের পক্ষে দাড়াবা, গুরুজনকে মেন, সৎ পথে থেক, শৃঙ্খলা রেখ, তাহলে জীবনে মানুষ হতে পারবা। সুতরাং দায়িত্ব পালনে তোমাদের সজাগ ও সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই হবে তোমাদের পেশাগত জীবনের প্রধান ব্রত। তোমাদের মনে রাখতে হবে, তোমরা এ দেশের সন্তান। জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তোমাদের সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার সমান অংশীদার হতে হবে। সুযোগ্য নেতৃত্ব, সার্বিক দিকনির্দেশনা, পেশাদারিত্ব, দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার মাধ্যমে তোমাদের দেশের সেবা করে যেতে হবে।
দেশে-বিদেশে দায়িত্ব পালনে দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দেখিয়ে আমাদের সেনাবাহিনী সব মহলের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তোমাদের এই সুনাম আরও এগিয়ে নিতে হবে। বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের মানুষ শান্তি আর সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জানবে-এটিই আমার প্রত্যাশা।থ
অনুষ্ঠানে মাধ্যমে ২৩৪ জন বাংলাদেশী, ২৯ জন সৌদি, ১ জন ফিলিস্তিনি, ১ জন শ্রীলংকানসহ মোট ২৬৫ জন ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত ক্যাডেটদের মধ্যে ৭৭তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে ২০৭ জন পুরুষ, ২৭ জন মহিলা ক্যাডেট রয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, আঞ্চলিক অধিনায়কসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, মন্ত্রী-সংসদ সদস্য, কূটনীতিক ও শিক্ষা সমাপনী ব্যাচের কমিশনপ্রাপ্ত ক্যাডেটদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।