মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ না :না:গঞ্জ পুলিশ সুপার
- আপডেট সময় : ০৫:২৩:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯২ বার পড়া হয়েছে
৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, আজকের মেঘনা ডটকম,
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:: নারায়ণগঞ্জকে চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে না নবাগত পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের।
তিনি বলেন, ‘অনেকেই আমাকে ফোন দিয়ে বলেছেন নারায়ণগঞ্জে চ্যালেঞ্জ কেমন? আমার কাছে চ্যালেঞ্জ মনে হয়নি। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে আমার দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে। কোন দরকার হলে ফোন দিবেন। আমি অপরিচিত ফোন বেশি ধরি।রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন এসপি জায়েদুল আলম।
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘তথ্য দিলে একটু জাস্টিফাই করে দিবেন। মিথ্যা তথ্য দিবেন না। মুন্সীগঞ্জে কিছু সাংবাদিক ছিল যারা বললে আমি জাস্টিফাই করতাম না কারণ তারা যা বলতো তা ১০০ পার্সেন্ট সত্য হতো। কিছু সাংবাদিক ছিল যারা সব সময় সত্য বলতো। সাড়ে তিন বছরের চাকরি জীবনে কখনো তাদের মিথ্যা বলতে দেখিনি। তারা আমার খুব আপন হয়ে গিয়েছিলেন। আপনারাও এরকম আপন হয়ে যাবেন।
শতভাগ নিরপেক্ষতা নিয়ে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যাক্ত করে তিনি বলেন, আমি সিম্পল এবং মেলামেশা কম করি, কোনো হুমকি ধামকি নেই। কিন্তু কাজের বেলায় পৃথিবীর কারো কথা শুনি না। যেটা সত্য, ভালো মনে করবো, সেটাই করবো, এক্ষেত্রে কারো কথাই রাখবো না। এতে আমাকে এখানে রাখেন আর না রাখেন। আমি তদবির শুনি, তখন অনেকেই বলেন অফিসার খুব ভালো। কিন্তু তদবির কখনোই রাখি না।
মুন্সিগঞ্জের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের পার্থক্য রয়েছে মন্তব্য করে এসপি বলেন, নারায়ণগঞ্জে তার কোনো চ্যালেঞ্জ নেই তবে, অনেক বেশি দায়িত্ব চলে এসেছে। নারায়ণগঞ্জ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা।
এসপি বলেন, আমেরিকার মানুষ ভালো, সেখানকার পুলিশও ভালো। আমার দেশে আমিসহ শতকরা নিরানব্বই ভাগ মানুষই সুযোগ পেলে অনিয়ম করি। আমরা সুযোগ পেলেই উল্টো পথে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করি। একটি টিকেট কাটবো সেটাও ভিন্ন ভাবে করার চেষ্টা করি। আমরা নিরানব্বই ভাগ মানুষই আইন ভাঙতে চাই। এখানে যদি আমেরিকান পুলিশ আসলেও সে যে ফেরেশতা হয়ে যাবে তা নয়। আমি চেষ্টা করবো পুলিশের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে।
সিদ্ধিরগঞ্জে গণপিটুনীতে বোবা নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এই মামলাটি আমি দেখবো। একজন নিরপরাধ ব্যক্তিও এখানে ফাঁসবে না, গ্রেফতার হবে না। আমার নির্দেশ ছাড়া। পুলিশকে ম্যানেজ করা, কোন পুলিশ অপকর্ম করে, এ ব্যাপারে আমি আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই। আমি আগে আমার ঘর ঠিক করবো।
হকার সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, হকার উচ্ছেদ কেন পারবো না? অবশ্যই পারবো। আপনার আমার সমর্থ ছাড়াতো আর তারা বসছে না। এ ব্যাপারে আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আছে, তাদের সাথে কথা বলবো। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যা নেওয়ার তা নেব।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি নেগেটিভ নিউজ করতে পারেন। সমস্যা নেই। কারণ, নেগেটিভ নিউজ করলে আপনার লস। এটা আপনার জেলা। এসপি আসবে, ডিসি আসবে চলে যাবে। তাই বলবো, নেগেটিভ নিউজ লেখার আগে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন যাতে সেটি সমাধান করা যায়। কারণ এই জেলা আপনার। পজেটিভভাবে তুলে ধরলে এতে আপনিই প্রশংসিত হবেন।
নবাগত এসপি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের নেগেটিভ নিয়ে আপনারা যা বলেছেন আমার কাছে তা নেগেটিভ মনে হয় না। নারায়ণগঞ্জ অনেক বড়। এখানে অনেক ভালো কাজ হয় কিন্তু ভাল কাজ তো কখনো বলা হয় না। খারাপটাই বেশি আসে। যেখানে ভাল কাজ হয় সেখানে খারাপ কাজ বেশিই হয়। আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি আমি মিথ্যা মামলা মোটেও সহ্য করবো না। কাউকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ না, কাউকে মামলা দেওয়ার জন্য পুলিশ না, কারো জমি দখল করার জন্য পুলিশ না। পুলিশ জনগণের সেবার জন্য। ২০১৬ সালে সর্বপ্রথম আমি পুলিশের ডোপ টেস্ট চালু করেছি, ১০০ টাকায় পুলিশের চাকরি চালু করছিলাম।
গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করে জায়েদুল আলম বলেন, ‘আমার ৫ ভাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। আমার বড় ভাই শহীদ বীর বিক্রম। আমার খালাতো ভাই ও ফুফাতো ভাই তারাও বীর মুক্তিযোদ্ধা। কোন চেতনা, নীতি ও নৈতিকতা না থাকলে কোন কাজ করা সম্ভব না। আমি সমাজের সর্বস্তরের সাথে কথা বলবো। আমি প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলেছি তারপর আমি ভেবেছি সবার আগে আপনাদের সাথে কথা বলা দরকার। কারণ আপনাদের কাছ থেকে আমি যে তথ্য পাবো তা আমি অন্য কারো কাছ থেকে পাবো না। আপনারাই বলতে পারবেন নারায়ণগঞ্জের প্রকৃত সমস্যা ও প্রকৃত সম্ভাবনাগুলো। আপনারাই পারবেন আমাকে সহায়তা করতে। আমি আপনাদের সহযোদ্ধা করতে যাই।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সাংবাদিক ভাইদের এক চাই। যদি তাদের মধ্যে বিভেদ হয়ে যায় তাহলে সমাজে আর কিছু থাকবে না। সব জায়গায় ভাগ চলে না। যেকোন ব্যাপারে বা যেকোন দাবি আদায়ে আমি দেখেছি আপনারা সব সময় সত্যের পাশে থাকেন আমার কাছে সেটা ভালো লেগেছে।
জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার ১৬ বছরের চাকরি জীবনে আমি শতভাগ নিরপেক্ষতার সাথে কাজ করেছি। কাজের বেলায় আমি কারো কথা শুনি না। আমি যেটা বুঝবো সেটাই করবো। আমি সব সময় বলি আমাকে রাখেন আর না রাখেন, চাকরি থেকে বিদায় করে দেন কিন্তু আমি কারো কথা শুনি না। কোন তদবির করতে পারবেন না। আমার কাছে তদবির করছে কিন্তু কাজ হইছে একজনও বলতে পারবে না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আলম মামুন, মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী, খোরশেদ আলমসহ জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রুমন রেজা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, নিজস্ব প্রতিবেদক আমাদের সময় ও দৈনিক সোজা সাপটার সম্পাদক আবু সাউদ মাসুদ, নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পনটী, ইনকিলাবের স্টাফ রিপোর্টার হাফিজুর রহমান মিন্টু, সিদ্ধিরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক ও এশিয়া খবর ২৪ ডট কম এর সম্পাদক এ এইচ ইমরান, মানবকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার নাহিদ আজাদ, জনকন্ঠের জেলা প্রতিনিধি খলিলুর রহমান, বিটিভির জেলা প্রতিনিধি মাহফুজুর রহমান, যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি রাজু আহমেদ, দৈনিক ইয়াদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, দৈনিক সচেতনের সম্পাদক কাজি ইসলাম মিয়া, অগ্রবানী প্রতিদিনের সম্পাদক স্বপন পোদ্দার, সংবাদের জেলা প্রতিনিধি সৌরভ হোসেন সিয়াম প্রমুখ।