ঢাকা ০৪:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৬ দিনে ফিরেছেন ৬১০ বাংলাদেশি

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৬:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২০ ২৭০ বার পড়া হয়েছে

১৭ জানুয়ারি ২০২০, আজকের মেঘনা ডটকম, ডেস্ক রিপোর্ট :

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ধরপাকড় চলছেই। গতবছর থেকে শুরু হওয়া এ ধরপাকড় নতুন বছরেও অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ১৬দিনে ফিরেছেন ৬১০ জন বাংলাদেশি। গত বছর অর্থ্যাৎ ২০১৯ সালে ফেরত আসা বাংলাদেশির সংখ্যা ২৫ হাজার ৭৮৯ জন। ফেরত আসা এসব কর্মীদের এক কাপড়েই ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ। ফিরে আসাদের বেশিরভাগেরই অভিযোগ, বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও তাদেরকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

নিয়মিত ফেরত আসার ধারাবাহিকতায় গতরাতেও দেশটি থেকে ফিরেছেন ১০৯ জন।

রাত ১১টা ২০মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০৪ বিমানযোগে তারা দেশে ফেরেন। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম এসব কর্মীদের জরুরি সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে।

গতকাল দেশে ফেরেন সিলেট জেলার তালেব (৩০)। তিনি মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন না। রাতেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে হস্তান্তর করেছে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। পাঁচ বছর পূর্বে শ্রমিক হিসাবে সৌদি আরর গমন করেন তালেব। কিন্তু গত দুই মাস পূর্বে সেখান মানসিক ভারসাম্য হারান।

মাত্র দুই মাস আগে দেশটিতে গিয়েছিলেন নোয়াখালীর আজিম হোসেন। তাকেও ফেরত পাঠানো হয়েছে। তার অভিযোগ, পাসপোর্টে তিন মাসের ভিসা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। বলেন, বাজার করার জন্য মার্কেটে যাওয়ার পথে আটক হন তিনি। গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের সঙ্গে নিয়োগকর্তা (কফিল) কথা বলার পরও তাকে দেশে পাঠানো হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জের রুহুল আমিন, কুমিল্লার ফিরোজ হোসেন ও মানিক, শরিয়তপুরের মিলন, যশোর জেলার মোসলেম উদ্দিন, বগুড়ার মেহেদি হাসান, গাজীপুরের রাজিবসহ ১০৯ বাংলাদেশি অধিকাংশের অবস্থা-ই এমন।

দেশে ফেরা কর্মীদের অভিযোগ, আকামা তৈরীর জন্য কফিলকে (নিয়োগকর্তা) টাকা প্রদান করলেও কফিল আকামা তৈরি করে দেয়নি। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও গ্রেপ্তারকৃত কর্মীর দায়দায়িত্ব নিচ্ছে না।

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, ২০১৯ সনে ২৫ হাজার ৭৮৯ বাংলাদেশিকে সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। নতুন বছরের শুরুর ১৬ দিনে এক হাজার ৬১০ জন বাংলাদেশি ফিরলেন দেশটি থেকে। ফেরত আসাদের বর্ণনা প্রায় একই রকম। প্রায় সবাই খালি হাতে ফিরেছেন। কয়েকমাস আগে গিয়েছিলেন এমন লোকও আছেন। তারা সবাই ভবিষ্যত নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায়।

শরিফুল হাসান গত বছরের পুরো পরিসংখ্যান দিয়ে জানান, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে মোট ৬৪ হাজার ৬৩৮ কর্মী দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ২৫ হাজার ৭৮৯ জন, মালয়েশিয়া থেকে ১৫ হাজার ৩৮৯ জন, সংযুক্ত আরব-আমিরাত থেকে ছয় হাজার ১১৭ জন, ওমান থেকে ৭ হাজার ৩৬৬ জন, মালদ্বীপ থেকে ২ হাজার ৫২৫ জন, কাতার থেকে ২ হাজার ১২ জন, বাহরাইন থেকে ১ হাজার ৪৪৮ জন ও কুয়েত থেকে ৪৭৯ জন শূণ্য হাতে ফিরেছেন- যাদের পরিচয় ডিপোর্টি।

তিনি বলেন, এই মানুষগুলোর পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত। ফেরত আসা প্রবাসীদের আমরা শুধু বিমানবন্দরে সহায়তা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছি না, তারা যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য কাউন্সিলিং, দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও আর্থিকভাবেও পাশে থাকতে চাই। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে কাজটি করতে হবে।

পাশাপাশি এভাবে যেন কাউকে শূন্য হাতে ফিরতে না হয় সেজন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়িত্ব নিতে হবে। দূতাবাস ও সরকারকেও বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে। বিশেষ করে ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা বন্ধ করা উচিত।

সূত্র : মানব জমিন

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

ট্যাগস :

১৬ দিনে ফিরেছেন ৬১০ বাংলাদেশি

আপডেট সময় : ০৬:৩৬:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২০

১৭ জানুয়ারি ২০২০, আজকের মেঘনা ডটকম, ডেস্ক রিপোর্ট :

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ধরপাকড় চলছেই। গতবছর থেকে শুরু হওয়া এ ধরপাকড় নতুন বছরেও অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ১৬দিনে ফিরেছেন ৬১০ জন বাংলাদেশি। গত বছর অর্থ্যাৎ ২০১৯ সালে ফেরত আসা বাংলাদেশির সংখ্যা ২৫ হাজার ৭৮৯ জন। ফেরত আসা এসব কর্মীদের এক কাপড়েই ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ। ফিরে আসাদের বেশিরভাগেরই অভিযোগ, বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও তাদেরকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

নিয়মিত ফেরত আসার ধারাবাহিকতায় গতরাতেও দেশটি থেকে ফিরেছেন ১০৯ জন।

রাত ১১টা ২০মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০৪ বিমানযোগে তারা দেশে ফেরেন। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম এসব কর্মীদের জরুরি সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে।

গতকাল দেশে ফেরেন সিলেট জেলার তালেব (৩০)। তিনি মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন না। রাতেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে হস্তান্তর করেছে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। পাঁচ বছর পূর্বে শ্রমিক হিসাবে সৌদি আরর গমন করেন তালেব। কিন্তু গত দুই মাস পূর্বে সেখান মানসিক ভারসাম্য হারান।

মাত্র দুই মাস আগে দেশটিতে গিয়েছিলেন নোয়াখালীর আজিম হোসেন। তাকেও ফেরত পাঠানো হয়েছে। তার অভিযোগ, পাসপোর্টে তিন মাসের ভিসা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। বলেন, বাজার করার জন্য মার্কেটে যাওয়ার পথে আটক হন তিনি। গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের সঙ্গে নিয়োগকর্তা (কফিল) কথা বলার পরও তাকে দেশে পাঠানো হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জের রুহুল আমিন, কুমিল্লার ফিরোজ হোসেন ও মানিক, শরিয়তপুরের মিলন, যশোর জেলার মোসলেম উদ্দিন, বগুড়ার মেহেদি হাসান, গাজীপুরের রাজিবসহ ১০৯ বাংলাদেশি অধিকাংশের অবস্থা-ই এমন।

দেশে ফেরা কর্মীদের অভিযোগ, আকামা তৈরীর জন্য কফিলকে (নিয়োগকর্তা) টাকা প্রদান করলেও কফিল আকামা তৈরি করে দেয়নি। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও গ্রেপ্তারকৃত কর্মীর দায়দায়িত্ব নিচ্ছে না।

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, ২০১৯ সনে ২৫ হাজার ৭৮৯ বাংলাদেশিকে সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। নতুন বছরের শুরুর ১৬ দিনে এক হাজার ৬১০ জন বাংলাদেশি ফিরলেন দেশটি থেকে। ফেরত আসাদের বর্ণনা প্রায় একই রকম। প্রায় সবাই খালি হাতে ফিরেছেন। কয়েকমাস আগে গিয়েছিলেন এমন লোকও আছেন। তারা সবাই ভবিষ্যত নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায়।

শরিফুল হাসান গত বছরের পুরো পরিসংখ্যান দিয়ে জানান, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে মোট ৬৪ হাজার ৬৩৮ কর্মী দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ২৫ হাজার ৭৮৯ জন, মালয়েশিয়া থেকে ১৫ হাজার ৩৮৯ জন, সংযুক্ত আরব-আমিরাত থেকে ছয় হাজার ১১৭ জন, ওমান থেকে ৭ হাজার ৩৬৬ জন, মালদ্বীপ থেকে ২ হাজার ৫২৫ জন, কাতার থেকে ২ হাজার ১২ জন, বাহরাইন থেকে ১ হাজার ৪৪৮ জন ও কুয়েত থেকে ৪৭৯ জন শূণ্য হাতে ফিরেছেন- যাদের পরিচয় ডিপোর্টি।

তিনি বলেন, এই মানুষগুলোর পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত। ফেরত আসা প্রবাসীদের আমরা শুধু বিমানবন্দরে সহায়তা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছি না, তারা যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য কাউন্সিলিং, দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও আর্থিকভাবেও পাশে থাকতে চাই। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে কাজটি করতে হবে।

পাশাপাশি এভাবে যেন কাউকে শূন্য হাতে ফিরতে না হয় সেজন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়িত্ব নিতে হবে। দূতাবাস ও সরকারকেও বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে। বিশেষ করে ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা বন্ধ করা উচিত।

সূত্র : মানব জমিন