রাষ্ট্রপতি হওয়াই ছিল মোশতাকের বড় খায়েশ
- আপডেট সময় : ০৪:২১:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২০ ১৭৮ বার পড়া হয়েছে
১৫ আগষ্ট ২০২০ আজকের মেঘনা ডটকম, ডেস্কঃ রাষ্ট্রপতি হওয়াই ছিল খুনি মোশতাকের বড় খায়েশ
বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম একটি নাম খন্দকার মোশতাক আহমেদ। বিশ্বাসঘাতক হিসেবে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। নামটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে ঘৃণিত ও নিন্দিত। তার বিশ্বাসঘাতকতার পেছনে বড় খায়েশ ছিল দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে বন্ধু হিসেবে বুকে টেনে নিলেও বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন এই বিশ্বাসঘাতক। জাতির পিতাকে হত্যার পরপরই নিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মোশতাকের ঘৃণিত চরিত্র নিয়ে অনেকেই লেখালেখি করেছেন। তারা চেষ্টা করেছিলেন, খন্দকার মোশতাকের মুখোশ উন্মোচন করার।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও লিখেছেন দেশের ইতিহাসের অন্যতম এ কলঙ্কিত মানুষটিকে নিয়ে। তার লেখা ‘শেখ মুজিব আমার পিতা বইয়ের ৪১ পৃষ্ঠায় ‘ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড অধ্যায়ে খুনি মোশতাকের প্রসঙ্গ টেনে লিখেছেন, ‘আবারও একবার বাংলার মাটিতে রচিত হলো বেইমানের ইতিহাস। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সঙ্গে বেইমানি করেছিল তারই সেনাপতি মীরজাফর ক্ষমতার লোভে, নবাব হওয়ার আশায়।থ
১৯৭৫ সালেও একই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটল বাংলাদেশে। রাষ্ট্রপতি হওয়ার খায়েশে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল তারই মন্ত্রিপরিষদের সদস্য খন্দকার মোশতাক। ঘাতকের দলে ছিলেন- কর্নেল রশিদ, কর্নেল ফারুক, মেজর ডালিম, হুদা, শাহরিয়ার, মহিউদ্দিন, খায়রুজ্জামান, মোসলেম গং।
পলাশীর প্রান্তরেও যেমন সেনাপতির গোপন ইশারায় নীরবে দাঁড়িয়েছিলেন নবাবের সৈন্যরা- ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টও নীরব ছিলেন তারা, যারা বঙ্গবন্ধুর একান্ত কাছের, যাদেরকে নিজ হাতে গড়ে তুলেছিলেন, বিশ্বাস করে ক্ষমতা দিয়েছিলেন। যাদের হাতে ক্ষমতা ছিল তাদের এতটুকু সক্রিয়তা, ইচ্ছা অথবা নির্দেশ বাঁচাতে পারত বঙ্গবন্ধুকে- খন্দকার মোশতাকের গোপন ইশারায় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিলেন তারা, কেউই এগিয়ে এলো না সাহায্য করতে।
পরিণতিতেও মোশতাক হয়েছিলেন মীরজাফর। বাংলার ইতিহাসের সেরা বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরের নবাবী কতদিন ছিল? তিনমাস পুরো করতে পারেননি- খন্দকার মোশতাকও রাষ্ট্রপতির পদে (যা সংবিধানের স্ব-নীতিমালা লঙ্ঘন করে হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে অর্জিত) তিন মাসের বেশি থাকতে পারেননি।
বাস্তবিকভাবে বেইমানদের কেউই বিশ্বাস করে না। এমনকি যাদের প্ররোচনায় এরা ঘটনা ঘটায়, যাদের সুতোর টানে এরা নাচে তারাও শেষ অবধি বিশ্বাস করে না। ইতিহাস সেই শিক্ষাই দেয়, কিন্তু মানুষ কি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়?
যুগে যুগে এ ধরনের বেইমান জন্ম নেয়, যাদের বিশ্বাসঘাতকতা এক একটা জাতিকে সর্বনাশের দিকে ঠেলে দেয়। ধ্বংস ডেকে আনে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করে বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকেই খুনিরা হত্যা করেছে। স্বাধীনতার মূল লক্ষ্যকে হত্যা করেছে। বাঙালির জাতির চরম সর্বনাশ করেছে।
শুরুতে এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয়নি। জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে খুনিদের আইনের শাসনের হাত থেকে রেহাই দিয়ে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ করে পুরস্কৃত করেছে। আইনের শাসনকে আপন গতিতে চলতে দেয়নি। বরং অন্যায়-অপরাধকে প্রশ্রয় দিয়ে লালিত করেছে। এই খুনিদের ঘৃণা করে বাংলার মানুষ!
স্বাধীনতা- বড়ই প্রিয় একটি শব্দ। যা দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা। পরাধীনতার নাগপাশে জর্জরিত থেকে দম বন্ধ হয়ে কে মরতে চায়? একদিন পাকিস্তান কায়েমের জন্য সকলে লড়েছিল। লড়েছিলেন বঙ্গবন্ধুও। কিন্তু পাকিস্তান জন্মলাভের পর বাঙালি কী পেল? না রাজনৈতিক স্বাধীনতা, না অর্থনৈতিক মুক্তি। বাঙালির ভাগ্যে কিছুই জুটল না, জুটল শোষণ বঞ্চনা নির্যাতন এমনকি মায়ের ভাষাও পাকিস্তানি শাসকরা কেড়ে নিতে চাইল। বুকের রক্ত দিয়ে বাঙালি তার মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করল। বাঙালি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দেয়ার নানা ষড়যন্ত্র চলতে থাকল।
দেশের সম্পদ পাচার করে বাঙালিকে নিঃস্ব করে দিয়ে ২২টি পরিবার সৃষ্টি করে শোষণ অব্যাহত রাখল।
আর বঙ্গবন্ধু মুজিব শোনালেন, স্বাধীনতার অমর বাণী। দেখালেন মুক্তির পথ। বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম- আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম- স্বাধীনতার সংগ্রাম।থ
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার ভাষ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর হত্যার মূল পরিকল্পনায় যে মোশতাক ছিলেন, তা স্পষ্ট হয় ১৫ আগস্টের এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পরপরই। ওইদিনই মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সূর্যসন্তান বলে আখ্যায়িত করেন। ক্ষমতায় বসে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মোশতাক ইমডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি, ‘জয় বাংলাথ স্লোগান পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদথ স্লোগান চালু করেন।
কারাবন্দি করা হয় আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মীকে। অবশ্য এত কিছুর পরও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেননি মোশতাক। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ৮৩ দিনের মাথায় ১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের পাল্টা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি।