উদ্ভাবন হলো নতুন জাতের তরমুজ
- আপডেট সময় : ১২:২৪:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০২০ ১৯৩ বার পড়া হয়েছে
পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ গ্রীস্মের তপ্ত রোদে এক ফালি সুস্বাদু তরমুজ শীতল পরশ এনে দেয় মানুষের প্রাণে। বাঙ্গাঁলির পছন্দের এই রসালো ফলটি সকলের কাছেই অতি প্রিয়। দেশের দক্ষিণ উপকূলে কৃষকের লাভজনক এই ফলটি চাষে প্রতিবছর প্রচুর অর্থ ব্যয় হয় তরমুজের বীজ সংগ্রহ করতে। প্রতিবছর তরমুজের বীজ বিদেশ থেকে আমদানী করা হয়। আর এ বাবদ বছরে প্রায় ৪শ কোটি টাকা ব্যায় হয়। আর এসব বীজ হাইব্রিড হওয়ায় উৎপাদিত ফল থেকে বীজ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না।
এছাড়া প্রতি বছর অলাদা আলাদা জাতের বীজ আমদানি করার ফলে এর অঙ্কুরোদ্গম, সফল পরিচর্যা করতে কৃষকদের বিভিন্ন সময় ক্ষতির মুখে পরতে হয়। তবে দেশের এলাকা সহিষ্ণু তরমুজের নিজস্ব জাত উদ্ভাবনে কাজ করছে পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষনা কেন্দ্র। ইতোমধ্যে লাল এবং হলুদ রং এর দুটি জাতের সফলতাও মিলেছে তাদের গবেষনায়। মাঠ পর্যায়ে সফলতার পর দু’টি জাতের অনুমোদনের অপেক্ষায় গবেষকরা।
পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব গবেষনা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, দেশের কৃষকদের বীজের চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর চীন, ভারত, জাপান এবং মালয়েশিয়া থেকে তরমুজের হাইব্রিড বীজ সংগ্রহ করতে হয়। বিভিন্ন কোম্পানী এসব হাইব্রিড বীজ নানান নামে সংগ্রহ করে থাকে। ফলে উৎপাদিত তরমুজের জাতের মান ও ধারাবাহিকতা থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনিস্টিটিউট এর আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব গবেষনা কেন্দ্র লেবুখালী কেন্দ্র চিন্তা করে কিভাবে একটি তরমুজের নিজস্ব জাত উদ্ভাবন করা যায়। এ জন্য ২০১৫ সাল থেকে গত ৫ বছর এই কেন্দ্রে গবেষণা চালানো হয়। গবেষণার ফলে তরমুজের দুটি জাত উদ্ভাবন করা হয়। জাত দুটি ওপেন পলিনেটেড ভ্যারাইটি (পরাগায়ন) হওয়ায় কৃষকরা এ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন এবং অঙ্কুরদ্গম হবে। ফলে কৃষককে প্রতি বছর বীজ ক্রয় করতে হবে না। অনেক সময় আমদানী করা বীজ অঙ্কুরদ্গম হয়না। তখন কৃষক ক্ষতির সম্মুখিন হন। পাশাপাশি শুধু গ্রীস্মকালেই নয় এই জাত দুটি সারা বছর আবাদ করা যাবে।
লেবুখালী আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইদ্রিস আলী হাওলাদার জানান, উদ্ভাবিত হলুদ এবং লাল তরমুজের বীজ পরাগায়ন হওয়ায় এর বীজ কৃষকরা সরাসরি সংরক্ষণ করতে পারবেন এবং বীজ থেকে সহজেই চারা বের হয়ে আসবে। বছরে তিন বার এই তরমুজ আবাদ করতে পারবেন কৃষকরা। ফলে কৃষক আর্থিক ভাবে বেশি লাভবান হবেন। ভাল বীজের নিশ্চয়তা থাকবে।
তিনি জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে বিদেশ থেকে বীজ আমদানী করতে ব্যায় হয় প্রায় ৪শ কোটি টাকা। জাত দুটি অনুমোদন পেলে তরমুজের বীজ আর বিদেশ থেকে আমদানী করতে হবে না তাই দেশের টাকা দেশেই থাকবে। অপরদিকে তরমুজটি যেমন খেতে মিস্টি তেমনি এর সাইজও অনেকটা ফ্যামিলি সাইজের। ফলে ক্রেতারারও এটি কিনতে আকৃষ্ট হবেন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্ট্রিটিউট এর আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবিত তরমুজের এই জাত দুটি জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে অনুমোদনের পর নাম করন করা হবে। পরে তা কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশের দক্ষিণ উপকূলের কৃষি নির্ভর অর্থনীতি আরও সম্মৃদ্ধ হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।