সংবাদ শিরোনাম ::
পুড়িয়ে মারার অনেকেই ২০১৩-১৪’র পেট্রোলবোমার আসামি, ফুটেজে প্রমাণ
ডেস্ক রিপোর্ট
- আপডেট সময় : ০৪:৫৮:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ নভেম্বর ২০২০ ১৯০ বার পড়া হয়েছে
পবিত্র কোরআন শরীফের অবমাননা নয়, মসজিদের মধ্যে ‘বাদানুবাদে জড়ানোর’ খেসারত হিসেবেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন শহীদুন নবী জুয়েল। মসজিদ থেকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পেছনে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের কর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। এমন ৫০ জনকে এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, ঘটনার সময় অনেকেই মোবাইল ফোনে এ হত্যাকাণ্ডের ছবি ধারণ করেন। এক পর্যায়ে তারা ন্যাশনাল ব্যাংকের বুড়িমারী শাখায় হামলা করে ভাঙচুর করেছে। সেখানে থাকা সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ফুটেজে বিশেষ ওই রাজনৈতিক দলের অনেক কর্মীকে চিহ্নিত করা হয়েছে; যারা ২০১৩ ও ২০১৪ সালে পেট্রোলবোমা ও অগ্নি সন্ত্রাসের মাধ্যমে নাশকতার বিভিন্ন মামলার আসামি।
নিহত জুয়েলের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন থেকে মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন জুয়েল। এ কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে ভারতীয় ওষুধ সেবন করতেন। ভারত থেকে সেই ওষুধ লোক দিয়ে আনাতেন তিনি। ঘটনার দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবারও ওষুধ আনতেই সীমান্ত এলাকা পাটগ্রামে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন স্কুল জীবনের বন্ধু সুলতান জোবায়ের আব্বাস।
জানা গেছে, দুজন একটি হোটেলে খাবার খাওয়ার পর পাশের ওই মসজিদটিতে আসরের নামাজ পড়তে যান। নামাজ শেষ করে জুয়েলের বন্ধু জোবায়ের হোলেটে চার্জে রেখে আসা মোবাইল ফোন আনতে যান। তিনি ফিরে এসে দেখেন, জুয়েলকে মারপিট করা হচ্ছে। ঠেকাতে গেলে তাকেও পেটাতে শুরু করে লোকজন।
নামাজের পর মসজিদ থেকে প্রায় সব মুসল্লি বেরিয়ে যান। এমন সময় আবুল হোসেন নামে এক ডেকোরেটর ব্যবসায়ী জুয়েলকে মারতে মারতে মসজিদ থেকে বাইরে নিয়ে আসেন। এসময় সেখানে মসজিদের খাদেম জোবেদ আলীও ছিলেন।
শুক্রবার তিনি সময় নিউজকে বলেন, ডেকোরেটর ব্যবসায়ী আবুল হোসেন কোরআনে পা রাখার জন্য শহীদুন নবীকে মারতে মারতে মসজিদ থেকে বের করে আনার পরই ঘটে পরবর্তী ঘটনা।
এলাকাবাসী জানান, খাদেম জোবেদ আলী কোরআন অবমাননার কথা অনেককেই বলেছেন। কিন্তু বাসেদ আলী নামে এক মুসল্লিকে তার মুখোমুখি করলে জোবেদ আলী কথা ঘোরান। এতে জোবেদের ওপর ক্ষেপে যান তিনি।
এদিকে জুয়েলকে প্রথমে মারধরে অভিযুক্ত আবুল হোসেনকে ঘটনার পর তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী ও মেয়ে জানান, মসজিদের ভেতর গালি দেয়ায় আবুল হোসেন একজনকে মেরেছিলেন বলে বাসায় ফিরে তাদের জানিয়েছিলেন।
তদন্তেও কোরআন অবমাননার প্রমাণ পায়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শনিবার (৩১ অক্টোবর) বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওহাব ভূঞা ও ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় রংপুরে ফিরে ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য সময় নিউজকে জানান, সেখানে পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিছু লোক উল্টাপাল্টা কিছু বুঝিয়েছে আর স্বার্থান্বেষী একটি মহল তার সুযোগ নিয়েছে।
পুলিশ পরিদর্শক সুমন মোহন্ত জানান, ঘটনা যা ঘটেছে তা প্রকাশ্য দিনের বেলাতেই সংঘটিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ ও মোবাইল ফোনের ফুটেজ তার সাক্ষী। এরইমধ্যে ইন্ধনদাতাদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে।
সিআইডির ক্রাইমসিন সদস্যরা মাঠে নেমেছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাটির সিনিয়র এএসপি আতাউর রহমান সময় নিউজকে জানান। তিনি বলেন, গুজব ছড়িয়ে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। গুজবের উৎস অর্থাৎ প্রথম কে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনার কোন পর্যায়ে কারা এবং কীভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে মানবাধিকার কমিশন। কমিশনের অভিযোগ ও তদন্ত বিভাগের পরিচালক আল মাহমুদ ফাইজুল কবির বিকেল ৫টার দিকে লালমনিরহাটে আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শহীদুন নবী জুয়েলের বন্ধু ও ওই ঘটনায় আহত সুলতান জোবায়েরের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন। রোববার (১ নভেম্বর) বুড়িমারীতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের কথা রয়েছে তাদের।
এ ঘটনায় শনিবার নিহত শহীদুন নবীর পরিবারের পক্ষ থেকে পাটগ্রাম থানায় আরও একটি মামলা হয়েছে। এর আগে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এবং পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে