পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জবানবন্দি দিলেন তিনজন
- আপডেট সময় : ০৩:২৮:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ নভেম্বর ২০২০ ১৯৮ বার পড়া হয়েছে
লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে শহিদুন্নবী জুয়েলকে হত্যার ঘটনায় দায় স্বীকার করে মসজিদের খাদেমসহ তিনজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে আমলি আদালত ৩-এর বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফেরদৌসী বেগমের আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তারা।
এছাড়া রিমান্ড ছাড়াই জবানবন্দি দিয়েছেন আব্দুল গণি নামে একজন।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে খাদেমসহ চারজনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন লালমনিরহাট আমলি আদালত-৩ এর বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফেরদৌসী বেগম।
দায় স্বীকার করে যারা জবানবন্দি দিয়েছেন তারা হলেন- বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খাদেম পাটগ্রাম ইউনিয়নের রহমানপুর গ্রামের জোবেদ আলী, বুড়িমারী ইউনিয়নের কামারেরহাট এলাকার জাহেদুল ইসলামের ছেলে মেহেদী হাসান রাজু, একই এলাকার আব্দুল গণি।
শনিবার সকালে আলোচিত ৩ মামলার প্রধান আসামি আবুল হোসেন ওরফে হোসেন ডেকোরেটরকে ঢাকায় গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ। এ নিয়ে এ মামলায় ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি ওমর ফারুক।
তাদের মধ্যে ৯ জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। শনিবার দ্বিতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে চারজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। যার মধ্যে খাদেমসহ দুইজন দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে রিমান্ড ছাড়াই একজন দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ৯ আসামির রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে শহিদুন্নবী জুয়েলকে হত্যার অভিযোগে তার চাচাত ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত অক্টোবর একটি মামলা করেন। একই ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পাটগ্রাম থানার এসআই শাহজাহান আলী বাদী হয়ে এবং ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচুরের অভিযোগে অপর একটি মামলা করেন বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত। বহুল আলোচিত ৩ মামলায় জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত ২৯ অক্টোবর বিকেলে সুলতান রুবায়াত সুমন নামে একজনকে সঙ্গে নিয়ে বুড়িমারী বেড়াতে আসেন শহিদুন্নবী জুয়েল। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা। নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরীফ নামাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই তার পায়ে পড়ে যায়। এ সময় কোরআর ও হাদিস বই তুলে চুম্বনও করেন জুয়েল। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে মুয়াজ্জিনের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান রুবায়াত সুমনকে পাশে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখে। খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসি বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে যান।
সন্ধ্যায় পুরো বাজারে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। এ সময় উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনের দরজা-জানালা ভেঙে প্রশাসনের কাছ থেকে জুয়েলকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে।
সন্ধ্যা থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মহন্তসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাটের ডিসি আবু জাফর ও এসপি আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। নিহত জুয়েলের সঙ্গী সুলতান রুবায়াত সুমনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।
নিহত যুবক শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রিপাড়ার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। গত বছর চাকরিচ্যুত হওয়ায় কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হারিয়ে ফেলেন তিনি।