দেবরের মোবাইলে ভাবীর অন্তরঙ্গ ভিডিও, লাশ মিললো খাটের তলায়
- আপডেট সময় : ০৭:১০:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪০ বার পড়া হয়েছে
৭ ডিসেম্বর ২০২০, আজকের মেঘনা. কম, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
বাসায় আসা-যাওয়ার সুবাদে দেবর মাধব দেবনাথের সঙ্গে ভাবী বীথি দেবনাথের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়। আর তখনই মাধব অন্তরঙ্গ মূহূর্তের কিছু ছবি ও ভিডিও ক্লিপ রেখে দেয় নিজের কাছে। সেই ভিডিওই কাল হয়ে দাঁড়ায় মাধবের। এই ঘটনার শেষ পরিণতি ঘটলো বীথির হাতে মাধব খুন হয়ে। খুনের পর প্রায় ৫০ ঘণ্টা লাশটিও পড়ে ছিলো ভাবীর খাটের নিচে। লাশ পচা গন্ধকে ইঁদুর পচা গন্ধ বলে সারা ঘরে বীথি ছড়িয়ে দেন এয়ার ফ্রেশনার এবং বিদেশি সুগন্ধি।
শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে যখন গন্ধ দূর হচ্ছিলো না তখন বীথির স্বামী পিন্টু দেবনাথ নিজে খাটের নিচে মুঠোফোনের আলো জ্বেলে দেখলেন আস্ত একটা লাশ তারই খাটের নিচে। তিনি তার ভগ্নিপতি দিপুকে ডেকে এনে লাশ দেখান।
দিপুর সাথে পরামর্শ করে পিন্টু তার আরেক বন্ধু পুলিশ সদস্য আইয়ুবকে মুঠোফোনে বিস্তারিত জানান। আইয়ুবের দেওয়া খবরে কোতোয়ালী থানা পুলিশ টেরিবাজার আফিম গলিতে পিন্টুর বাসা থেকে মাধবের লাশ উদ্ধার করে। উদ্ধারের সময় বাঁধা ছিল মাধবের হাত-পা।
পুলিশ মাধব দেবনাথের লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় ময়নাতদন্তের জন্য। আর পিন্টুর পরিবারের ছয় সদস্যকে থানা হেফাজতে নেয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। জিজ্ঞাসাবাদেই বীথি বিস্তারিত জানান পুলিশকে। পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ করলে তিনি আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বলেন, হত্যার দায় স্বীকার করে বীথি রোববার (৬ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সারোয়ার জাহানের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
বীথির জবানবন্দিতে উঠে আসে মাধব দেবনাথ হত্যার আদ্যোপান্ত। নিহত মাধব বীথির স্বামী পিন্টুর ফুফাতো ভাই। মামাতো ভাইয়ের বাসায় টাকার বিনিময়ে খাবার খেতো মাধব। বাসায় আসা যাওয়া সুবাদে একসময় দেবর-ভাবীর মধ্যে তৈরি হয় পরকীয়ার সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক গড়ায় দেহ-বিনিময় পর্যন্ত। আর তখনই মাধব একান্ত মূহূর্তের কিছু ছবি ও ভিডিও ক্লিপ রেখে দেয় নিজের কাছে। টাকা-পয়সা লেনদেন নিয়ে পিন্টুর সাথে মাধবের ঝামেলা হয়।
পিন্টু মাধবকে নিজের বাসায় আসতে নিষেধ করেন। তখন মাধব পিন্টুর স্ত্রী বীথিকে বাসার বাইরে তার সাথে দেখা করতে বারবার চাপ দেয়। বীথি দেখা না করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটি বেনামি আইডি খুলে পিন্টুকে নিজের স্ত্রীর আপত্তিকর একটি ভিডিও ক্লিপ দেয়। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে শুরু হয় অবিশ্বাস।
সেই থেকে বীথি মাধবকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বীথি আবার মাধবের সাথে যোগাযোগ শুরু করে- যেটা ছিলো অনেকটা বাধ্য হয়ে অভিনয়। মাধবও সেই ফাঁদে পা দেয়। সুযোগ বুঝে মাধব ২ ডিসেম্বর রাত ১০টার পর লোডশেডিং চলাকালে কৌশলে বীথির বেডরুমে পৌঁছে যায়। বীথি মাধবকে প্রথমে চলে যেতে বলে। মাধব না যাওয়ায় বীথি তাৎক্ষণিক তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
মাধবের চাহিদা অনুযায়ী বীথি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি হয়। মাধব বিছানায় গেলে তাকে প্রেমের ছলে ভুল বুঝিয়ে প্রথমে তার পা, পরে হাত দু’টো বেঁধে নেন বীথি। তখনো মাধব টের পায়নি বীথির পরের পদক্ষেপেই তার ভবলীলা সাঙ্গ হতে যাচ্ছে। হাত-পা বাঁধার পরই গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন মাধবকে।
বীথি দেবনাথ তার জবানবন্দিতে আরো জানান, মাধবকে হত্যার পর তিনি লাশটি খাটের নিচে সরিয়ে নেন। এরই মধ্যে তার মাঝে অস্থিরতা প্রকাশ পায়- যা তার শাশুড়ির চোখে পড়ে। শাশুড়ি তার চোখে মুখে পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে দেন। এভাবে বুধবার রাত কেটে বৃহস্পতিবার দিন গড়িয়ে আসে শুক্রবার দিন। বীথির অস্থিরতায় তার মা এবং নিকটাত্মীয়রাও বাসা ঘুরে যান।
শুক্রবার সন্ধ্যায় দুর্গন্ধ পেয়ে শাশুড়ি বীথিকে ঘরে খুঁজে দেখতে বলেন কোনো ইঁদুর মরে আছে কিনা। বীথি ইঁদুর খোঁজার অভিনয় করে সারা ঘরে এয়ার ফ্রেশনার ও সুগন্ধি স্প্রে করেন। কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত যতো বাড়ছিলো, দুর্গন্ধও ততো প্রকট হচ্ছিলো। পিন্টু রাত ১১টার পর বাইরে থেকে বাসায় ফিরে গোসল করার আগে দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে নিজের খাটের নিচে খুঁজে পান লাশ- তার মামাতো ভাই মাধবের লাশ।
অপরদিকে ২ ডিসেম্বর রাত থেকে হাজারী গলির স্বর্ণের কারিগর মাধবকে না পেয়ে তার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি হয়। ৩ ডিসেম্বর বিকেলে বীথি মাধবের মুঠোফোন চালু করে নিজের সেটে তার সিম একটিভ করেন। ওই সময়ে তিনি মাধবের বেশ কয়েকজন নিকটাত্মীয় ও বন্ধুকে ক্ষুদেবার্তা দেন এবং অল্প সময় পরই তা সুইচড অফ করে দেন। জানালা দিয়ে মাধবের মোবাইল সেট নালায় ফেলে দেন- যা শনিবার পুলিশ উদ্ধার করে।
দেবর-ভাবীর পরকীয়া খুনের মাধ্যমে শেষের স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর পুলিশ মাধব হত্যা মামলায় একমাত্র আসামি হিসেবে বীথিকে আদালতে সোপর্দ করে অন্য পাঁচজনকে ছেড়ে দেয়। আদালত বীথিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।