ঢাকা ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিহত হওয়ার তিন বছর পর খুনের রহস্য উদঘটন, শ্যালকের স্ত্রীতে মজে খুন হন শহিদুল

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৬:৫৯:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯২ বার পড়া হয়েছে

৮ ডিসেম্বর ২০২০, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

কুষ্টিয়ায় শহিদুল ইসলাম (৪৭) নামে এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার তিন বছর পর তার খুনের রহস্য উদঘটন করেছে পুলিশের অপরাধ বিভাগ (সিআইডি)। শ্যালকের স্ত্রীতে মজে শহিদুল খুন হন বলে জানায় সিআইডি।

২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন শহিদুল ইসলাম। এ ঘটনায় শহিদুলের মা তমিরুন নেসা বাদী হয়ে কুষ্টিয়ার আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় শহিদুলের শ্যালক মোতাহারের স্ত্রী রোজিনা বেগম, তার বাবা জব্বার শেখ ও মা মতিরন নেসাকে আসামি করা হয়।

আদালত মামলাটি থানাকে নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেয়। এরপর থানা পুলিশের পর পুলিশ সদর দফতর ২০১৯ সালের নভেম্বরে অপহরণ মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মালিবাগ সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম বলেন, অপহরণ মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাবার পর গত ২২ নভেম্বর কুমারখালী থেকে রোজিনা বেগমকে গ্রেপ্তার করি। পরবর্তীতে রোজিনা স্বীকারোক্তিমূলক জবাবন্দি দেয়। সে হত্যার কথা স্বীকার করে।

হত্যার নেপথ্যে বিচারবহির্ভূত সম্পর্ক শহিদুলের শ্যালক মোতাহের সঙ্গে রোজিনা বেগমের বিয়ে হয়। মোতাহেরর ভালো ঘর না থাকায় সে বউ নিয়ে দুলাভাই শহিদুলের বাড়িতেই ছিলো। এসময় শ্যালকের স্ত্রীর প্রেমে পড়ে শহিদুল। বিষয়টি জানাজানি হলে, মোতাহার তার স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা বাড়ি করে সেখানে থাকা শুরু করেন। তবে এর কয়েক বছর পর মোতাহার মারা যান। এরমধ্যে শহিদুলের স্ত্রীও মারা যায়।

তখন শহিদুল শ্যালকের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়মিত করার চেষ্টা করেন। তাকে বিয়ে করতে চান। তবে সম্পর্ক থাকলেও রোজিনা শহিদুলকে বিয়ে করতে রাজী হয় না। এদিকে তাদের গ্রামে এই সম্পর্ক নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরবর্তীতে রোজিনা তার বাবার বাড়িতে চলে যান। তবে শহিদুলের সঙ্গে রোজিনার যোগাযোগ ছিলো।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুজিৎ কুমার ঘোষ জানান, কয়েকমাস পর রোজিনা ঢাকার মানিকগঞ্জে চলে আসেন। আকিজ গ্রুপে কাজ করেন। সেখানে মোমিন নামে একজনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। মোমিনের গ্রামের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুরে। তাকে বিয়ে করে রোজিনা। তবে এরপরো শহিদুল তাকে ফোন দিতো। পরবর্তীতে মোমিন ও রোজিনা পরিকল্পনা করে শহিদুলকে হত্যা করার। এরপর তারা দু’জন ঢাকা থেকে মাগুরার শ্রীপুরে চলে যায়। রোজিনা শহিদুলকে ফোন দিয়ে জানায়, সে তাকে বিয়ে করবে। ২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাতে বিয়ের কথা বলে শ্রীপুরে নিয়ে যায়।

শ্রীপুরের লাঙ্গলবাদ বাজার থেকে এক কেজি মিষ্টি কিনে শহিদুল। ওই বাজারে আগে থেকেই শহিদুলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে রোজিনা ও মোমিন। তারা দু’জন শহিদুলকে একটি খোলা মাঠ থেকে হাঁটিয়ে নিয়ে যায়। দূরের আলো দেখিয়ে রোজিনা শহিদুলকে বলেন, ‘ওই বাত্বি জ্বলা বাড়িটি আমার বান্ধবীর, সেখানে যাবো’। এরপর খোলা মাঠের ভেতর দিয়ে তাকে হাঁটিয়ে নিয়ে যায়। মাঠের কিছুদূর যাবার পর রোজিনা ও মোমিন মিলে শহিদুলকে ঝাপটে ধরে। প্রায় আধাঘণ্টা তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর শহিদুল ক্লান্ত হয়ে গেলে রোজিনা তার বুকের ওপরে ওঠে বসে দু’হাত চেপে ধরে। মোমেন চাকু দিয়ে গলায় একাধিক বার ছুরিকাঘাত করে। তবে চাকুতে ধার না থাকায় প্রথমে শহিদুলের গলা কাটেনি। পরে চাকুর সরু মাথা দিয়ে মোমিন গুতাতে থাকে। এরপর শহিদুল নিস্তেজ হয় যায়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার হাত পায়ের রগ কেটে দেয় মোমিন। পরবর্তীতে সেখানে লাশ রেখে তারা মোমিনের বাড়িতে যায়।

ধস্তাধস্তির সময় চাকুর আঘাতে মোমিন ও রোজিনারও হাত কেটে যায়। তাই তারা বাড়িতে গিয়ে জানায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলো, তাই তাদের হাত কেটেছে। পরের দিন শ্রীপুর থানা পুলিশ অজ্ঞাত হিসেবে শহিদুলের লাশ উদ্ধার করে। ধারণা করা হয়েছিলো, চরমপন্থিরা তাকে হত্যা করেছে। একটি হত্যা মামলা হলেও থানা পুলিশ তদন্তের কোনো কূল-কিনারা না করতে পারায় হত্যা মামলার ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করে। লাশ অজ্ঞাত হিসেবেই থাকে। কারণ ওই এলাকায় শহিদুলকে কেউ চিনতে পারেনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুজিৎ ঘোষ আরো বলেন, আমি অপহরণ মামলা তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে শহিদুলের সর্বশেষ অবস্থান কোথায় ছিলো তা শনাক্তের চেষ্টা করি। তার ব্যবহৃত মোবাইলটির সর্বশেষ অবস্থান ছিলো মাগুরার শ্রীপুরের লাঙ্গলবাদ বাজারে। রোজিনার ব্যবহৃত সিমটিও ওই একই এলাকাতে ছিলো। এরপর আমরা রোজিনাকে ঢাকার আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি। পরবর্তীতে সেসব স্বীকার করে। এরপর মোমিনকেও গ্রেপ্তার করি। সেও স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

রোজিনার দেয়া স্বীকারোক্তির পর সিআইডি মাগুরার শ্রীপুর থানায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঠিকই রোজিনার বক্তব্য অনুযায়ী ওই এলাকা থেকে একজনের লাশ উদ্ধার হয়। যাকে অজ্ঞাত হিসেবে দাফন কাফন করা হয়েছে। হত্যা মামলা হলেও সেটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম বলেন, আমরা অপহরণ মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পেরেছি শহিদুলকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা হত্যা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করবো।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

ট্যাগস :

নিহত হওয়ার তিন বছর পর খুনের রহস্য উদঘটন, শ্যালকের স্ত্রীতে মজে খুন হন শহিদুল

আপডেট সময় : ০৬:৫৯:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২০

৮ ডিসেম্বর ২০২০, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

কুষ্টিয়ায় শহিদুল ইসলাম (৪৭) নামে এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার তিন বছর পর তার খুনের রহস্য উদঘটন করেছে পুলিশের অপরাধ বিভাগ (সিআইডি)। শ্যালকের স্ত্রীতে মজে শহিদুল খুন হন বলে জানায় সিআইডি।

২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন শহিদুল ইসলাম। এ ঘটনায় শহিদুলের মা তমিরুন নেসা বাদী হয়ে কুষ্টিয়ার আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় শহিদুলের শ্যালক মোতাহারের স্ত্রী রোজিনা বেগম, তার বাবা জব্বার শেখ ও মা মতিরন নেসাকে আসামি করা হয়।

আদালত মামলাটি থানাকে নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেয়। এরপর থানা পুলিশের পর পুলিশ সদর দফতর ২০১৯ সালের নভেম্বরে অপহরণ মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মালিবাগ সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম বলেন, অপহরণ মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাবার পর গত ২২ নভেম্বর কুমারখালী থেকে রোজিনা বেগমকে গ্রেপ্তার করি। পরবর্তীতে রোজিনা স্বীকারোক্তিমূলক জবাবন্দি দেয়। সে হত্যার কথা স্বীকার করে।

হত্যার নেপথ্যে বিচারবহির্ভূত সম্পর্ক শহিদুলের শ্যালক মোতাহের সঙ্গে রোজিনা বেগমের বিয়ে হয়। মোতাহেরর ভালো ঘর না থাকায় সে বউ নিয়ে দুলাভাই শহিদুলের বাড়িতেই ছিলো। এসময় শ্যালকের স্ত্রীর প্রেমে পড়ে শহিদুল। বিষয়টি জানাজানি হলে, মোতাহার তার স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা বাড়ি করে সেখানে থাকা শুরু করেন। তবে এর কয়েক বছর পর মোতাহার মারা যান। এরমধ্যে শহিদুলের স্ত্রীও মারা যায়।

তখন শহিদুল শ্যালকের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়মিত করার চেষ্টা করেন। তাকে বিয়ে করতে চান। তবে সম্পর্ক থাকলেও রোজিনা শহিদুলকে বিয়ে করতে রাজী হয় না। এদিকে তাদের গ্রামে এই সম্পর্ক নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরবর্তীতে রোজিনা তার বাবার বাড়িতে চলে যান। তবে শহিদুলের সঙ্গে রোজিনার যোগাযোগ ছিলো।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুজিৎ কুমার ঘোষ জানান, কয়েকমাস পর রোজিনা ঢাকার মানিকগঞ্জে চলে আসেন। আকিজ গ্রুপে কাজ করেন। সেখানে মোমিন নামে একজনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। মোমিনের গ্রামের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুরে। তাকে বিয়ে করে রোজিনা। তবে এরপরো শহিদুল তাকে ফোন দিতো। পরবর্তীতে মোমিন ও রোজিনা পরিকল্পনা করে শহিদুলকে হত্যা করার। এরপর তারা দু’জন ঢাকা থেকে মাগুরার শ্রীপুরে চলে যায়। রোজিনা শহিদুলকে ফোন দিয়ে জানায়, সে তাকে বিয়ে করবে। ২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাতে বিয়ের কথা বলে শ্রীপুরে নিয়ে যায়।

শ্রীপুরের লাঙ্গলবাদ বাজার থেকে এক কেজি মিষ্টি কিনে শহিদুল। ওই বাজারে আগে থেকেই শহিদুলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে রোজিনা ও মোমিন। তারা দু’জন শহিদুলকে একটি খোলা মাঠ থেকে হাঁটিয়ে নিয়ে যায়। দূরের আলো দেখিয়ে রোজিনা শহিদুলকে বলেন, ‘ওই বাত্বি জ্বলা বাড়িটি আমার বান্ধবীর, সেখানে যাবো’। এরপর খোলা মাঠের ভেতর দিয়ে তাকে হাঁটিয়ে নিয়ে যায়। মাঠের কিছুদূর যাবার পর রোজিনা ও মোমিন মিলে শহিদুলকে ঝাপটে ধরে। প্রায় আধাঘণ্টা তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর শহিদুল ক্লান্ত হয়ে গেলে রোজিনা তার বুকের ওপরে ওঠে বসে দু’হাত চেপে ধরে। মোমেন চাকু দিয়ে গলায় একাধিক বার ছুরিকাঘাত করে। তবে চাকুতে ধার না থাকায় প্রথমে শহিদুলের গলা কাটেনি। পরে চাকুর সরু মাথা দিয়ে মোমিন গুতাতে থাকে। এরপর শহিদুল নিস্তেজ হয় যায়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার হাত পায়ের রগ কেটে দেয় মোমিন। পরবর্তীতে সেখানে লাশ রেখে তারা মোমিনের বাড়িতে যায়।

ধস্তাধস্তির সময় চাকুর আঘাতে মোমিন ও রোজিনারও হাত কেটে যায়। তাই তারা বাড়িতে গিয়ে জানায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলো, তাই তাদের হাত কেটেছে। পরের দিন শ্রীপুর থানা পুলিশ অজ্ঞাত হিসেবে শহিদুলের লাশ উদ্ধার করে। ধারণা করা হয়েছিলো, চরমপন্থিরা তাকে হত্যা করেছে। একটি হত্যা মামলা হলেও থানা পুলিশ তদন্তের কোনো কূল-কিনারা না করতে পারায় হত্যা মামলার ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করে। লাশ অজ্ঞাত হিসেবেই থাকে। কারণ ওই এলাকায় শহিদুলকে কেউ চিনতে পারেনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুজিৎ ঘোষ আরো বলেন, আমি অপহরণ মামলা তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে শহিদুলের সর্বশেষ অবস্থান কোথায় ছিলো তা শনাক্তের চেষ্টা করি। তার ব্যবহৃত মোবাইলটির সর্বশেষ অবস্থান ছিলো মাগুরার শ্রীপুরের লাঙ্গলবাদ বাজারে। রোজিনার ব্যবহৃত সিমটিও ওই একই এলাকাতে ছিলো। এরপর আমরা রোজিনাকে ঢাকার আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি। পরবর্তীতে সেসব স্বীকার করে। এরপর মোমিনকেও গ্রেপ্তার করি। সেও স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

রোজিনার দেয়া স্বীকারোক্তির পর সিআইডি মাগুরার শ্রীপুর থানায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঠিকই রোজিনার বক্তব্য অনুযায়ী ওই এলাকা থেকে একজনের লাশ উদ্ধার হয়। যাকে অজ্ঞাত হিসেবে দাফন কাফন করা হয়েছে। হত্যা মামলা হলেও সেটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম বলেন, আমরা অপহরণ মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পেরেছি শহিদুলকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা হত্যা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করবো।