ভুল করে ঢাকার পানি সরানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ওয়াসাকে: এমডি
- আপডেট সময় : ০৬:২৫:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ জানুয়ারী ২০২১ ১৬৮ বার পড়া হয়েছে
০৪ জানুয়ারী ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
১৯৮৮ সালে জারি হওয়া একটি প্রজ্ঞাপনকে ‘ভুল’ আখ্যা দিয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেছেন, ‘একটি ভুল প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার বৃষ্টির পানি অপসারণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসাকে দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির পানি অপসারণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার ছিল না। দেশের অন্যান্য শহরেও এই দায়িত্ব ওয়াসার কাছে নেই। সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনই দায়িত্বটি পালন করছে। কিন্তু ঢাকায় শুধু ব্যতিক্রম।’
তাকসিম এ খান দাবি করেন, ‘ঢাকা ওয়াসা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনকারী একটি সেরা সংস্থা। এই কাজে সংস্থাটি বিশ্বের জন্য রোল মডেল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পানি সরবরাহ সংস্থা গবেষণার জন্য ঢাকা ওয়াসায় আসছে।’
সোমবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে ওয়াসা ভবনে ‘বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসা থেকে সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর’ বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
১৯৮৮ সালের ৬ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব কাজী আব্দুল মতিনের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে ঢাকা মহানগরীর বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা মিউনিসিপাল করপোরেশনের ওপর ন্যস্ত করার স্থলে ঢাকা ওয়াসার ওপর ন্যস্ত করার সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ওই বছর থেকে রাজধানী ঢাকার বৃষ্টির পানির নিরসনের দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। কিন্তু এই দীর্ঘ ৩২ বছর ওয়াসা সেই দায়িত্ব পালন করেনি বলে অভিযোগ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও নগর বিশ্লেষকদের। যে কারণে সামান্য বৃষ্টিতে নগরীতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এর পরেও এই ব্যর্থতার দায় ঢাকা ওয়াসা নিতে চাচ্ছে না।
তাকসীম এ খান বলেন, ‘১৯৮৮ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ঢাকা শহরের পানি সরবরাহের পাশাপাশি পয়ঃনিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার কাছে হস্তান্তর করা হয়। যা ওয়াসা আইন ১৯৯৬ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ওই প্রজ্ঞাপনেই বলা আছে দায়িত্বটি সিটি করপোরেশনের কাছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু একটি ভুল প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসাকে দেওয়া হয়। অধ্যাদেশ জারির পর থেকে ঢাকা ওয়াসাসহ সিটি কপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও রাজউকসহ সাতটি সংস্থার মাধ্যমে ঢাকা শহরের বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কাজ পরিচালনা করে আসছিল।’
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী ঢাকা শহরের পানি ব্যবস্থাপনার আমূল পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মত দেন। ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসা অনুধাবন করে ১৯৮৮ সালে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন সংক্রান্ত জারিকৃত অধ্যাদেশটি ঢাকা ওয়াসা অ্যাক্ট-১৯৯৬ এর সাথে সাংঘর্ষিক। এর প্রেক্ষাপটে ২০১২ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে ঢাকা ওয়াসা’র পক্ষ থেকে পয়ঃনিষ্কাশনের কাজটা সিটি করপোরেশনে হস্তান্তর করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ঢাকা ওয়াসার অনুরোধে কারিগরি কমিটিসহ বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে জানিয়ে তিনি বলেন, বিবিধ কারণে ওই সময়ে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমান সরকার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব সাত হাতে না করে একহাতে রাখার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হন। ঢাকা ওয়াসা থেকে দুই সিটি করপোরেশনের কাছে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব হস্তান্তর করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেন তিনি।
২০১৯ সালে মন্ত্রী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণর পর থেকেই বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসা থেকে দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করার বিষয়ে নানা বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা সিটি করপোরেশনেরর নবনির্বাচিত মাননীয় মেয়ররা ২০২০ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর তাদেরকে নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী গত ২৬ নভেম্বর একটি পরামর্শ সভা করেন এবং সিদ্ধান্তে আসেন যে, ঢাকা শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা দুই সিটি করপোরেশনের কাছে ন্যস্ত হওয়া সমীচীন।
এ ধারাবাহিকতায় গত ৩১ ডিসেম্বর বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরে একটি সমঝোতা চুক্তি হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
ওয়াসার অধীনে থাকাবস্থায় ঢাকার খালগুলো ধীরে ধীরে মৃত ও অকেজ হয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ করে আসছিলেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
এ প্রসঙ্গে প্রকৌশলী তাকসিম বলেন, একটি খালের বহুবিধ ব্যবহার থাকলেও ওয়াসার দায়িত্ব ছিল কেবল খাল ব্যবহার করে পানি সরিয়ে দেয়া। ফলে খালগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া খাল নিয়ে আলাদা কোনো বাজেটও ওয়াসার ছিল না।
তিনি বলেন, আমরা কেবল খাল থেকে সলিড বর্জ্য নিষ্কাশন করতাম। অথচ একটা খাল হতে পারে সুন্দর জলাশয়, খাল হতে পারে নৌপথ, আবার খালের দুই ধারে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা যায়। এর কোনোটিই করার অধিকার আমাদের ছিল না। এসব কারণে খালের পূর্ণাঙ্গ রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়নি।
বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতে পুরো নগরী বৃষ্টিতে ডুবে থাকে, তাই সংস্থাটি এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে এখন সিটি করপোরেশনকে দিতে চায় কিনা, গণমাধ্যম কর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা ওয়াসার দায়িত্ব নয়। আমাদের সব টেকনিক্যাল সাপোর্ট আমরা সিটি করপোরেশনকে দিয়ে দেবো। আইন অনুযায়ী এই দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। বিষয়টি অনুধাবন করার পর ২০১২ সালে আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানাই। তখন মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে দেয়। কিন্তু সেই কমিটির রেজাল্ট আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৬ সালে মেয়র আনিসুল হক আমাদের সঙ্গে একমত হয়ে এই দায়িত্ব তিনি নিতে চেয়েছিলেন।’
ওয়াসার মালিকানাধীন খালের পর এবার বৃষ্টির পানিও নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করতে চায় সংস্থাটি। এতে সংস্থাটির অর্ধেকের চেয়ে কাজ কমে গেছে। এ অবস্থায় ঢাকা ওয়াসা সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে যেতে চায় কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা মন্ত্রণালয়ও বলতে পারবে না।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ওয়াসার ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাহমুদ হোসেন, পরিচালক (উন্নয়ন) আবুল কাশেম, পরিচালক (কারিগরি) শহিদুল ইসলামসহ ওয়াসার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।