ঢাকা ০৭:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন: টিকাদান কর্মসূচী কি গভীর সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ ?

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৪:৩৫:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ মার্চ ২০২১ ১৯০ বার পড়া হয়েছে

৩০ মার্চ ২০২১,আজকের মেঘনা ডটকম, ডেস্ক রিপোর্ট :

বাংলাদেশে আগামী ৮ই এপ্রিল থেকে করোনা ভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরুর কথা থাকলেও নতুন করে টিকা পাওয়া নিয়ে সংকটের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। এমনকি প্রথম ডোজ পাওয়া সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মতো পর্যাপ্ত টিকাও এ মূহুর্তে স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে নেই।

পাশাপাশি ভারতে তৈরি অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশটি সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারির পর এ নিয়ে আশঙ্কা আরও তীব্রতর হয়েছে।

জানুয়ারি থেকে গত তিন মাসে বাংলাদেশের কেনা টিকার মধ্যে দেড় কোটি ডোজ আসার কথা থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবেই এখন পর্যন্ত সে টিকা থেকে বাংলাদেশে পেয়েছে অর্ধেকেরও কম।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে যথাসময়ে টিকা না এলে তারা ‘অন্য পরিকল্পনা’ করবেন।

তবে বাস্তবতা হলো সেরাম ইন্সটিটিউট ছাড়া অন্য কোন সূত্র থেকে টিকা আনার জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি এখন পর্যন্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ।

এমন পরিস্থিতিতে সেরাম ইন্সটিটিউট চুক্তি অনুযায়ী টিকা দিতে ব্যর্থ হলে করোনার টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। গভীর সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি কোভিশিল্ড নামে উৎপাদন করছে সিরাম ইনস্টিটিউট

যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন টিকা নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে এবং তারা আশা করছেন চাহিদা মতো টিকা সময়মতই পেয়ে যাবেন তারা।

“টিকা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। কাজ চলছে। সময়মতই টিকা পাবে বাংলাদেশ। তাই কোন সংকট হবে না,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা।

“দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু আগে প্রথম ডোজ দেয়া সাময়িকভাবে বন্ধ করা হবে। আবার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মধ্যেই নতুন করে টিকা আসা নিশ্চিত হয়ে যাবে। এরপর আবার নতুন করে টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। ফলে সঙ্কটের আশঙ্কা নেই”।

যদিও আগামী ৮ই এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া শুরুর কথা থাকলেও তার আগে প্রথম ডোজ দেয়া কবে বন্ধ হবে সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

আবার প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ করা হলে, যারা টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন তাদেরও অনেকের টিকা না পাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে।

কত টিকা এলো, কত টিকা আছে, কত টিকা আসবে

বাংলাদেশে গত ২৭শে জানুয়ারি করোনা ভাইরাসের টিকা দেয়ার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। পরে ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় গন টিকাদান।

প্রথম ডোজের টিকা দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়ার জন্য আট সপ্তাহের বিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার এবং সে হিসেবে সে হিসেবে আট এপ্রিল থেকেই দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হওয়ার কথা।

আর টিকা আনার ক্ষেত্রে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিলো তাতে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ হিসেবে মোট তিন কোটি ডোজ টিকা আনার কথা ছিলো ছয় মাসের মধ্যে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাস টিকা রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে

স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে ২৯শে মার্চ দুপুর পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট টিকা নিয়েছেন ৫২ লাখ ৬৩ হাজার ২৪৮ জন। নিবন্ধন করেছেন ৬৭ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯০ জন।

অন্যদিকে এর বিপরীতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ টিকা, যার মধ্যে ৩২ লাখ ডোজই ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া।

আর বেক্সিমকো ও সেরাম ইন্সটিটিউটের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী যে তিন কোটি ডোজ আসার কথা তার মধ্যে গত ২৫শে জানুয়ারি ৫০ লাখ আর ২৩শে ফেব্রুয়ারি এসেছে ২০ লাখ ডোজ।

এখন ভারত রপ্তানি সাময়িক স্থগিত করায় বাকী টিকা কবে আসে তা নিয়ে ব্যাপক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

আইইডিসিআর-এর পরামর্শক ডাঃ মুশতাক হোসেন বলছেন, “টিকা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা আছে কিন্তু এটা বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশের জন্য এটা বড় কোনো সমস্যা হবে না। তাছাড়া সেরামের পাশাপাশি অন্য সূত্রগুলো থেকেও চেষ্টা করার কথা সরকার বলছে। যে ধরণের তৎপরতা আছে তাতে আশা করছি টিকা চলে আসবে।”

এর আগে সোমবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির চেয়ার অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছিলেন প্রথম ডোজের টিকা যারা নিয়েছে তাদের জন্য দ্বিতীয় ডোজের টিকা সুরক্ষিত আছে, যদিও সবার জন্য সেটি নেই।

তিনি বলেন “এ কথা সত্যি সবার জন্য দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেই। কিন্তু আমরা যখন কাজ শুরু করবো, টিকা যাতে এসে যায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি”।

এ মূহুর্তে ৪২ লাখ ডোজ মজুত আছে জানিয়ে তিনি আশা করেন যে আগামী মাসে কিছু টিকা তারা পাবেন যার ভিত্তিতে সবার (প্রথম ডোজ নেয়া) দ্বিতীয় ডোজ দেয়া নিশ্চিত হবে।

এসব কারণেই প্রশ্ন উঠেছে যে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরুর পরেও যদি নতুন করে টিকা না আসে তাহলে পরিস্থিতি কেমন হবে? সূত্র : বিবিসি বাংলা

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

ট্যাগস :

করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন: টিকাদান কর্মসূচী কি গভীর সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ ?

আপডেট সময় : ০৪:৩৫:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ মার্চ ২০২১

৩০ মার্চ ২০২১,আজকের মেঘনা ডটকম, ডেস্ক রিপোর্ট :

বাংলাদেশে আগামী ৮ই এপ্রিল থেকে করোনা ভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরুর কথা থাকলেও নতুন করে টিকা পাওয়া নিয়ে সংকটের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। এমনকি প্রথম ডোজ পাওয়া সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মতো পর্যাপ্ত টিকাও এ মূহুর্তে স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে নেই।

পাশাপাশি ভারতে তৈরি অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশটি সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারির পর এ নিয়ে আশঙ্কা আরও তীব্রতর হয়েছে।

জানুয়ারি থেকে গত তিন মাসে বাংলাদেশের কেনা টিকার মধ্যে দেড় কোটি ডোজ আসার কথা থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবেই এখন পর্যন্ত সে টিকা থেকে বাংলাদেশে পেয়েছে অর্ধেকেরও কম।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে যথাসময়ে টিকা না এলে তারা ‘অন্য পরিকল্পনা’ করবেন।

তবে বাস্তবতা হলো সেরাম ইন্সটিটিউট ছাড়া অন্য কোন সূত্র থেকে টিকা আনার জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি এখন পর্যন্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ।

এমন পরিস্থিতিতে সেরাম ইন্সটিটিউট চুক্তি অনুযায়ী টিকা দিতে ব্যর্থ হলে করোনার টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। গভীর সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি কোভিশিল্ড নামে উৎপাদন করছে সিরাম ইনস্টিটিউট

যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন টিকা নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে এবং তারা আশা করছেন চাহিদা মতো টিকা সময়মতই পেয়ে যাবেন তারা।

“টিকা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। কাজ চলছে। সময়মতই টিকা পাবে বাংলাদেশ। তাই কোন সংকট হবে না,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা।

“দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু আগে প্রথম ডোজ দেয়া সাময়িকভাবে বন্ধ করা হবে। আবার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মধ্যেই নতুন করে টিকা আসা নিশ্চিত হয়ে যাবে। এরপর আবার নতুন করে টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। ফলে সঙ্কটের আশঙ্কা নেই”।

যদিও আগামী ৮ই এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া শুরুর কথা থাকলেও তার আগে প্রথম ডোজ দেয়া কবে বন্ধ হবে সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

আবার প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ করা হলে, যারা টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন তাদেরও অনেকের টিকা না পাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে।

কত টিকা এলো, কত টিকা আছে, কত টিকা আসবে

বাংলাদেশে গত ২৭শে জানুয়ারি করোনা ভাইরাসের টিকা দেয়ার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। পরে ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় গন টিকাদান।

প্রথম ডোজের টিকা দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়ার জন্য আট সপ্তাহের বিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার এবং সে হিসেবে সে হিসেবে আট এপ্রিল থেকেই দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হওয়ার কথা।

আর টিকা আনার ক্ষেত্রে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিলো তাতে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ হিসেবে মোট তিন কোটি ডোজ টিকা আনার কথা ছিলো ছয় মাসের মধ্যে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাস টিকা রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে

স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে ২৯শে মার্চ দুপুর পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট টিকা নিয়েছেন ৫২ লাখ ৬৩ হাজার ২৪৮ জন। নিবন্ধন করেছেন ৬৭ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯০ জন।

অন্যদিকে এর বিপরীতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ টিকা, যার মধ্যে ৩২ লাখ ডোজই ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া।

আর বেক্সিমকো ও সেরাম ইন্সটিটিউটের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী যে তিন কোটি ডোজ আসার কথা তার মধ্যে গত ২৫শে জানুয়ারি ৫০ লাখ আর ২৩শে ফেব্রুয়ারি এসেছে ২০ লাখ ডোজ।

এখন ভারত রপ্তানি সাময়িক স্থগিত করায় বাকী টিকা কবে আসে তা নিয়ে ব্যাপক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

আইইডিসিআর-এর পরামর্শক ডাঃ মুশতাক হোসেন বলছেন, “টিকা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা আছে কিন্তু এটা বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশের জন্য এটা বড় কোনো সমস্যা হবে না। তাছাড়া সেরামের পাশাপাশি অন্য সূত্রগুলো থেকেও চেষ্টা করার কথা সরকার বলছে। যে ধরণের তৎপরতা আছে তাতে আশা করছি টিকা চলে আসবে।”

এর আগে সোমবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির চেয়ার অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছিলেন প্রথম ডোজের টিকা যারা নিয়েছে তাদের জন্য দ্বিতীয় ডোজের টিকা সুরক্ষিত আছে, যদিও সবার জন্য সেটি নেই।

তিনি বলেন “এ কথা সত্যি সবার জন্য দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেই। কিন্তু আমরা যখন কাজ শুরু করবো, টিকা যাতে এসে যায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি”।

এ মূহুর্তে ৪২ লাখ ডোজ মজুত আছে জানিয়ে তিনি আশা করেন যে আগামী মাসে কিছু টিকা তারা পাবেন যার ভিত্তিতে সবার (প্রথম ডোজ নেয়া) দ্বিতীয় ডোজ দেয়া নিশ্চিত হবে।

এসব কারণেই প্রশ্ন উঠেছে যে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরুর পরেও যদি নতুন করে টিকা না আসে তাহলে পরিস্থিতি কেমন হবে? সূত্র : বিবিসি বাংলা