ঢাকা ০১:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় মারা গেলেন ভারতের সেরা অ্যাথলিট মিলখা সিং

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৫:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুন ২০২১ ১৭৯ বার পড়া হয়েছে

১৯ জুন ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জটিলতায় ৯১ বছর বয়সে মারা গেছেন ভারতের অন্যতম সেরা অ্যাথলিট মিলখা সিং। ‘দ্যা ফ্লাইয়িং শিখ’ বা ‘উড়ন্ত শিখ’ উপাধি পাওয়া সিং চারবার এশিয়ান গোল্ড মেডেল বিজয়ী হয়েছিলেন। ১৯৬০’র রোম অলিম্পিকে চারশ মিটার দৌড়ে তিনি চতুর্থ হয়েছিলেন।

২০১৩ সালে তার জীবনী নিয়ে বলিউডে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ নামের চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছিলো। মিলখা সিংয়ের স্ত্রী নির্মল খের-যিনি নিজেও একসময় ভলিবল ক্যাপ্টেন ছিলেন- আগের সপ্তাহেই ৮৫ বছর বয়সে মারা যান।

গত মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন মিলখা সিং। চণ্ডীগড়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে তার মৃত্যু হয়।

প্রয়াত অ্যাথলিটের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মিলখা সিংকে স্বাধীন ভারতের খেলা জগতের প্রথম তারকা বলে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। মিলখা যেভাবে ভারতে ট্রাক এবং মাঠে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, তা কিংবদন্তীর পর্যায়ে চলে গেছে।

আন্তর্জাতিক অ্যাথলিট চ্যাম্পিয়নশীপে তিনি পাঁচবার স্বর্ণপদক পেয়েছেন। ৮০টি দৌড়ের মধ্যে ৭৭টিতে জয় পাওয়ায় ১৯৫৯ সালে তাকে হেলম ওয়ার্ল্ড ট্রফি দেয়া হয়। ব্রিটিশ ভারতে একটি ছোট গ্রামে বড় হয়ে ওঠেন মিলখা সিং।

মুলতান প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে তার ছেলেবেলা কাটে। ভারত ভাগের সময় তার চোখের সামনে তার পিতা-মাতা এবং সাত ভাইবোনকে হত্যা করা হয়। যখন তার পিতা পড়ে যান, তার শেষ শব্দ ছিলো, ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ বা মিলখা, দৌড়ে পালা। সেই ছেলে দৌড়াতে শুরু করে- প্রথমে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য, পরবর্তীতে পদক পাওয়ার জন্য।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর এতিম মিলখা সিং ভারতে আসার পর সেনাবাহিনীতে চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত টিকে থাকার জন্য ছোটখাটো অপরাধ আর নানারকম খণ্ড কাজ করতে শুরু করেন। সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার পরেই তার ক্রীড়া প্রতিভার বিকাশ হতে শুরু করে।

১৯৫৮ সালের কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণপদক জয় করেন মিলখা সিং। রোম অলিম্পিকে চারশ মিটার দৌড়ে তিনি চতুর্থ অবস্থায় শেষ করেন।

১৯৬০ সালে পাকিস্তানের লাহোরে হওয়া আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক কম্পিটিশনে অংশ নেয়ার জন্য তিনি আমন্ত্রণ পান। কিন্তু ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ছেড়ে আসার পর তিনি আর সেখানে ফিরে যেতে রাজি ছিলেন না। তাই প্রথমে যেতে অস্বীকৃতি জানান।পরে মিলখা সিং পাকিস্তানে যান এবং পাকিস্তানের আবদুল খালিককে হারিয়ে দৌড়ে বিজয়ী হন।

পাকিস্তানের তখনকার প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের কাছ থেকে পদক নেয়ার সময় সিং তার ডাক নাম পান, যা পরবর্তী জীবনজুড়ে তার সঙ্গে ছিলো।

‘জেনারেল আইয়ুব আমাকে বলেন, মিলখা, তুমি পাকিস্তানে এসেছো এবং পালিয়ে যাওনি। তুমি আসলে পাকিস্তানে উড়ে এসেছো। পাকিস্তান তোমাকে উড়ন্ত শিখ উপাধিতে ভূষিত করছে। মিলখা সিংকে যদি বর্তমান বিশ্ব উড়ন্ত শিখ নামে জেনে থাকে, সেই ক্রেডিট আসলে আইয়ুব খান এবং পাকিস্তানের,’ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন মিলখা সিং।

যদিও তিনি অলিম্পিক পদক জয় করতে পারেননি, কিন্তু তার একমাত্র আকাঙ্ক্ষা ছিল, ভারতের কেউ একদিন এই পদক জয় করবে। খবর: বিবিসি বাংলা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

ট্যাগস :

করোনায় মারা গেলেন ভারতের সেরা অ্যাথলিট মিলখা সিং

আপডেট সময় : ০৮:৩৫:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুন ২০২১

১৯ জুন ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জটিলতায় ৯১ বছর বয়সে মারা গেছেন ভারতের অন্যতম সেরা অ্যাথলিট মিলখা সিং। ‘দ্যা ফ্লাইয়িং শিখ’ বা ‘উড়ন্ত শিখ’ উপাধি পাওয়া সিং চারবার এশিয়ান গোল্ড মেডেল বিজয়ী হয়েছিলেন। ১৯৬০’র রোম অলিম্পিকে চারশ মিটার দৌড়ে তিনি চতুর্থ হয়েছিলেন।

২০১৩ সালে তার জীবনী নিয়ে বলিউডে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ নামের চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছিলো। মিলখা সিংয়ের স্ত্রী নির্মল খের-যিনি নিজেও একসময় ভলিবল ক্যাপ্টেন ছিলেন- আগের সপ্তাহেই ৮৫ বছর বয়সে মারা যান।

গত মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন মিলখা সিং। চণ্ডীগড়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে তার মৃত্যু হয়।

প্রয়াত অ্যাথলিটের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মিলখা সিংকে স্বাধীন ভারতের খেলা জগতের প্রথম তারকা বলে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। মিলখা যেভাবে ভারতে ট্রাক এবং মাঠে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, তা কিংবদন্তীর পর্যায়ে চলে গেছে।

আন্তর্জাতিক অ্যাথলিট চ্যাম্পিয়নশীপে তিনি পাঁচবার স্বর্ণপদক পেয়েছেন। ৮০টি দৌড়ের মধ্যে ৭৭টিতে জয় পাওয়ায় ১৯৫৯ সালে তাকে হেলম ওয়ার্ল্ড ট্রফি দেয়া হয়। ব্রিটিশ ভারতে একটি ছোট গ্রামে বড় হয়ে ওঠেন মিলখা সিং।

মুলতান প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে তার ছেলেবেলা কাটে। ভারত ভাগের সময় তার চোখের সামনে তার পিতা-মাতা এবং সাত ভাইবোনকে হত্যা করা হয়। যখন তার পিতা পড়ে যান, তার শেষ শব্দ ছিলো, ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ বা মিলখা, দৌড়ে পালা। সেই ছেলে দৌড়াতে শুরু করে- প্রথমে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য, পরবর্তীতে পদক পাওয়ার জন্য।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর এতিম মিলখা সিং ভারতে আসার পর সেনাবাহিনীতে চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত টিকে থাকার জন্য ছোটখাটো অপরাধ আর নানারকম খণ্ড কাজ করতে শুরু করেন। সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার পরেই তার ক্রীড়া প্রতিভার বিকাশ হতে শুরু করে।

১৯৫৮ সালের কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণপদক জয় করেন মিলখা সিং। রোম অলিম্পিকে চারশ মিটার দৌড়ে তিনি চতুর্থ অবস্থায় শেষ করেন।

১৯৬০ সালে পাকিস্তানের লাহোরে হওয়া আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক কম্পিটিশনে অংশ নেয়ার জন্য তিনি আমন্ত্রণ পান। কিন্তু ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ছেড়ে আসার পর তিনি আর সেখানে ফিরে যেতে রাজি ছিলেন না। তাই প্রথমে যেতে অস্বীকৃতি জানান।পরে মিলখা সিং পাকিস্তানে যান এবং পাকিস্তানের আবদুল খালিককে হারিয়ে দৌড়ে বিজয়ী হন।

পাকিস্তানের তখনকার প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের কাছ থেকে পদক নেয়ার সময় সিং তার ডাক নাম পান, যা পরবর্তী জীবনজুড়ে তার সঙ্গে ছিলো।

‘জেনারেল আইয়ুব আমাকে বলেন, মিলখা, তুমি পাকিস্তানে এসেছো এবং পালিয়ে যাওনি। তুমি আসলে পাকিস্তানে উড়ে এসেছো। পাকিস্তান তোমাকে উড়ন্ত শিখ উপাধিতে ভূষিত করছে। মিলখা সিংকে যদি বর্তমান বিশ্ব উড়ন্ত শিখ নামে জেনে থাকে, সেই ক্রেডিট আসলে আইয়ুব খান এবং পাকিস্তানের,’ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন মিলখা সিং।

যদিও তিনি অলিম্পিক পদক জয় করতে পারেননি, কিন্তু তার একমাত্র আকাঙ্ক্ষা ছিল, ভারতের কেউ একদিন এই পদক জয় করবে। খবর: বিবিসি বাংলা।