ঢাকা ০২:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারত-মালয়েশিয়া-দুবাইয়ে মানবপাচারকারী চক্রের সমন্বয়ক ছিলেন নদী

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৯:০৩:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুন ২০২১ ১৯৪ বার পড়া হয়েছে

২২ জুন ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার মডেল নদী আক্তার ইতি ওরফে জয়া আক্তার জান্নাত ওরফে নূরজাহানসহ (২৮) ভারত, মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে মানবপাচারকারী পাচার চক্রের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। তিনি পাচারের উদ্দেশ্যে আনা নারীদের যশোর সীমান্তে তার বাড়িতে রাখতেন। সময় সুযোগ অনুযায়ী তিনি ভুক্তভোগী নারীদের ভারতে পাচার করতেন।

মঙ্গলবার (২২ জুন) সকালে রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের ডিসি কার্যালয়ে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ।

এর আগে সোমবার (২১ জুন) বিকেলে যশোর ও নড়াইলের সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা নদী আক্তার ইতি ওরফে জয়া আক্তার জান্নাত ওরফে নূরজাহানসহ ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশের একটি টিম। চক্রের গ্রেপ্তার অন্য সদস্যরা হলেন- মো. আল-আমিন হোসেন (২৮), আমিরুল ইসলাম (৩০), পলক মণ্ডল (২৬), মো. সাইফুল ইসলাম (২৮), মো. তরিকুল ইসলাম (২৬) ও বিনাশ শিকদার (৩৩)।

সংবাদ সম্মেলনে ডিসি মো. শহীদুল্লাহ বলেন, পাচার হওয়া ভুক্তভোগী নারীদের কাছে নদীর অন্তত ১০টি নাম পাওয়া গেছে। সে একেক সময় একেক নাম ব্যবহার করতেন। অনুসন্ধানে আমরা জানতে পারি-পাচার নারীদের কাছে সে নদী হিসেবে পরিচিত। ভারতে তাকে সবাই ইতি নামে চেনে। আবার ভারতীয় আধার কার্ডে তার নাম জয়া আক্তার জান্নাত। অপরদিকে বাংলাদেশি পাসপোর্টে তার নাম রয়েছে নুর জাহান। এদিকে সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকায় তাকে জলি এবং যশোর সীমান্তে প্রীতি নামে পরিচিত এই নারী।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নদীর সম্পর্কে জানা গেছে, ২০০৫ সালে শীর্ষ সন্ত্রাসী রাজীব হোসেনের সঙ্গে নদীর বিয়ে হয়েছিলো। ২০১৫ সালে একটি বন্দুকযুদ্ধে রাজীবের মৃত্যু হয়। সেই সময়ের পর থেকে নদী মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে যুক্ত হন। পর্যায়ক্রমে ভারত, মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে মানবপাচার চক্রের অন্যতম একজন সমন্বয়ক হয়ে উঠেন গ্রেপ্তার নদী।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রের গ্রেপ্তার হওয়া সদস্য আল-আমিন হোসেন ২০২০ সালে (ঈদুল আযহার চারদিন পর) ভারতে নারী পাচার করতে গিয়ে একবার বিএসএফের কাছে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। পাচারের উদ্দেশ্যে আনা নারীদের তার বাসায় রাখতেন। আল-আমিন মানবপাচার ছাড়াও মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তার নামে যশোরের শার্শা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা রয়েছে। চক্রের অপর সদস্য সাইফুল ইসলাম শার্শার পাঁচভূলট বাজারে মোবাইল রিচার্জ ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করেন। মানবপাচারে জড়িত খোকন, আব্দুল হাই, সবুজ, আল-আমিন ও একজন ইউপি সদস্য, তার মাধ্যমেই বিকাশে অর্থ লেনদেন করতেন। আবার এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি টের পেলে সঙ্গে সঙ্গে চক্রের সব সদস্যদের সতর্ক করার কাজটিও করতেন। তার বিকাশ একাউন্ট সম্বলিত মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে।

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই চক্রের সদস্য পলক যশোরের মনিরামপুর ঢাকুরিয়া স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার গাহঘাটা থানার নলকড়া গ্রামে নানা বাড়িতে চলে যায়। পরবর্তীতে তিনি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার একটি ডিগ্রি নেয় এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শুরু করেন। বেনাপোলের খোকন, ভারতে অবস্থানকারী বকুল ওরফে খোকন, তাসলিমা ওরফে বিউটি ও চক্রের আরও সদস্যদের সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে। সে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা নিতে আসা গ্রামের দরিদ্র মেয়েদেরকে ব্যাঙ্গালুরে চক্রের সদস্য তাসলিমা ওরফে বিউটির কাছে পাঠাতেন। সেখান থেকেই তার মানবপাচার শুরু হয়। এরপর পরবর্তীতে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত মেয়েদেরকে আধার কার্ড প্রস্তুত করে দেওয়ার পাশাপাশি নিরাপদ ‘সেফ হোম’ এ অবস্থান এবং ব্যাঙ্গালুরে নির্ধারিত স্থানে পাঠানোর দায়িত্ব নেয় তিনি।

আসামিদের কাছ থেকে জব্দ হওয়া আধার কার্ডসহ বিভিন্ন কাগজপত্রগুলো তৈরি করতে কারা (ভারতীয়রা নাকি বাংলাদেশি) সহায়তা করছে? জানতে চাইলে ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, এগুলো তৈরিতে ভারতীয় লোকেরা সহয়তা করেছে।

চক্রের মূলহোতা নদীর সঙ্গে টিকটক হৃদয়ের ঘনিষ্ঠতা কীভাবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদী, হৃদয় বাবুসহ আরো দুই-একজনের নাম আগে উল্লেখ করেছিলাম তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং তাদের সহযোগিতায় তারা পাচার করেছে।

ভারতে যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে তার সঙ্গে নদীর সম্পৃক্ততা কতোটুকু? এ বিষয়ে তেজগাঁও ডিসি বলেন, টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে যেহেতু নদীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে সেহেতু ওই ভিডিওর সঙ্গেও নদীর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

ট্যাগস :

ভারত-মালয়েশিয়া-দুবাইয়ে মানবপাচারকারী চক্রের সমন্বয়ক ছিলেন নদী

আপডেট সময় : ০৯:০৩:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুন ২০২১

২২ জুন ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার মডেল নদী আক্তার ইতি ওরফে জয়া আক্তার জান্নাত ওরফে নূরজাহানসহ (২৮) ভারত, মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে মানবপাচারকারী পাচার চক্রের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। তিনি পাচারের উদ্দেশ্যে আনা নারীদের যশোর সীমান্তে তার বাড়িতে রাখতেন। সময় সুযোগ অনুযায়ী তিনি ভুক্তভোগী নারীদের ভারতে পাচার করতেন।

মঙ্গলবার (২২ জুন) সকালে রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের ডিসি কার্যালয়ে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ।

এর আগে সোমবার (২১ জুন) বিকেলে যশোর ও নড়াইলের সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা নদী আক্তার ইতি ওরফে জয়া আক্তার জান্নাত ওরফে নূরজাহানসহ ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশের একটি টিম। চক্রের গ্রেপ্তার অন্য সদস্যরা হলেন- মো. আল-আমিন হোসেন (২৮), আমিরুল ইসলাম (৩০), পলক মণ্ডল (২৬), মো. সাইফুল ইসলাম (২৮), মো. তরিকুল ইসলাম (২৬) ও বিনাশ শিকদার (৩৩)।

সংবাদ সম্মেলনে ডিসি মো. শহীদুল্লাহ বলেন, পাচার হওয়া ভুক্তভোগী নারীদের কাছে নদীর অন্তত ১০টি নাম পাওয়া গেছে। সে একেক সময় একেক নাম ব্যবহার করতেন। অনুসন্ধানে আমরা জানতে পারি-পাচার নারীদের কাছে সে নদী হিসেবে পরিচিত। ভারতে তাকে সবাই ইতি নামে চেনে। আবার ভারতীয় আধার কার্ডে তার নাম জয়া আক্তার জান্নাত। অপরদিকে বাংলাদেশি পাসপোর্টে তার নাম রয়েছে নুর জাহান। এদিকে সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকায় তাকে জলি এবং যশোর সীমান্তে প্রীতি নামে পরিচিত এই নারী।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নদীর সম্পর্কে জানা গেছে, ২০০৫ সালে শীর্ষ সন্ত্রাসী রাজীব হোসেনের সঙ্গে নদীর বিয়ে হয়েছিলো। ২০১৫ সালে একটি বন্দুকযুদ্ধে রাজীবের মৃত্যু হয়। সেই সময়ের পর থেকে নদী মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে যুক্ত হন। পর্যায়ক্রমে ভারত, মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে মানবপাচার চক্রের অন্যতম একজন সমন্বয়ক হয়ে উঠেন গ্রেপ্তার নদী।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রের গ্রেপ্তার হওয়া সদস্য আল-আমিন হোসেন ২০২০ সালে (ঈদুল আযহার চারদিন পর) ভারতে নারী পাচার করতে গিয়ে একবার বিএসএফের কাছে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। পাচারের উদ্দেশ্যে আনা নারীদের তার বাসায় রাখতেন। আল-আমিন মানবপাচার ছাড়াও মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তার নামে যশোরের শার্শা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা রয়েছে। চক্রের অপর সদস্য সাইফুল ইসলাম শার্শার পাঁচভূলট বাজারে মোবাইল রিচার্জ ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করেন। মানবপাচারে জড়িত খোকন, আব্দুল হাই, সবুজ, আল-আমিন ও একজন ইউপি সদস্য, তার মাধ্যমেই বিকাশে অর্থ লেনদেন করতেন। আবার এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি টের পেলে সঙ্গে সঙ্গে চক্রের সব সদস্যদের সতর্ক করার কাজটিও করতেন। তার বিকাশ একাউন্ট সম্বলিত মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে।

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই চক্রের সদস্য পলক যশোরের মনিরামপুর ঢাকুরিয়া স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার গাহঘাটা থানার নলকড়া গ্রামে নানা বাড়িতে চলে যায়। পরবর্তীতে তিনি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার একটি ডিগ্রি নেয় এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শুরু করেন। বেনাপোলের খোকন, ভারতে অবস্থানকারী বকুল ওরফে খোকন, তাসলিমা ওরফে বিউটি ও চক্রের আরও সদস্যদের সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে। সে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা নিতে আসা গ্রামের দরিদ্র মেয়েদেরকে ব্যাঙ্গালুরে চক্রের সদস্য তাসলিমা ওরফে বিউটির কাছে পাঠাতেন। সেখান থেকেই তার মানবপাচার শুরু হয়। এরপর পরবর্তীতে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত মেয়েদেরকে আধার কার্ড প্রস্তুত করে দেওয়ার পাশাপাশি নিরাপদ ‘সেফ হোম’ এ অবস্থান এবং ব্যাঙ্গালুরে নির্ধারিত স্থানে পাঠানোর দায়িত্ব নেয় তিনি।

আসামিদের কাছ থেকে জব্দ হওয়া আধার কার্ডসহ বিভিন্ন কাগজপত্রগুলো তৈরি করতে কারা (ভারতীয়রা নাকি বাংলাদেশি) সহায়তা করছে? জানতে চাইলে ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, এগুলো তৈরিতে ভারতীয় লোকেরা সহয়তা করেছে।

চক্রের মূলহোতা নদীর সঙ্গে টিকটক হৃদয়ের ঘনিষ্ঠতা কীভাবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদী, হৃদয় বাবুসহ আরো দুই-একজনের নাম আগে উল্লেখ করেছিলাম তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং তাদের সহযোগিতায় তারা পাচার করেছে।

ভারতে যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে তার সঙ্গে নদীর সম্পৃক্ততা কতোটুকু? এ বিষয়ে তেজগাঁও ডিসি বলেন, টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে যেহেতু নদীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে সেহেতু ওই ভিডিওর সঙ্গেও নদীর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।