ঢাকা ০৭:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নৌকার সমর্থন না করায় বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে ওঠবস

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ১০:২৩:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১ ১৮৮ বার পড়া হয়েছে

২৪ জুন ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করায় ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়েছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিরূপ মন্তব্য দেখা গেছে।

মঙ্গলবার (২২ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই বৃদ্ধের ঘর ভাঙচুরের করে অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুটসহ তার এক ছেলের স্ত্রী ও এক ভাইয়ের স্ত্রীকেও মারধর করা হয়।

ভুক্তভোগী কুদ্দুস হাওলাদার (৬৫) আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাতাকাটা গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

কুদ্দুস হাওলাদার বলেন, সোমবার (২১ জুন) আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মহসিন হাওলাদারকে সমর্থন করি। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীকে নির্বাচনে পরাজিত হন। আর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন নৌকার প্রার্থী মো. আখতারুজ্জামান খান বাদল।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আখতারুজ্জামান খান বাদলের কর্মী ও সমর্থক কাইউম হাওলাদারের ছেলে রাশেদুল, আমজাদ হাওলাদারের ছেলে মনিরুল, সোহেলের ছেলে মিরাজ ও নাসিরের ছেলে ইলিয়াসসহ অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন লোক আমাকে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যায়। এরপর তারা আমার ভাইয়ের স্ত্রী ও পুত্রবধূসহ নাতি-নাতনিদের সামনে আমাকে মারধর করে কান ধরিয়ে ওঠবস করায়। এতে আমার ছেলেবউ রুমানা ও ভাইয়ের বউ ফিরোজা বাধা দিলে তাদেরও মারধর করে তারা। পরে তারা ঘরের শোকেস ও আলমারি ভেঙে ১৮ হাজার টাকা ও লক্ষাধিক টাকার স্বর্ণালংকারও নিয়ে যায়।

পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট মহসিন হাওলাদার বলেন, নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী অংশ নেবে এবং জয়-পরাজয় থাকবে। তাই বলে পরাজিত প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের এভাবে লাঞ্ছিত করবে, মারধর করবে, বাড়িঘর ভাঙচুর করবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। বৃদ্ধ কুদ্দুস হাওলাদারের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে চরম লজ্জাজনক ও ন্যক্কারজনক ঘটনা। তাই আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আখতারুজ্জামান খান বাদল নিজের কর্মী ও সমর্থকদের দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা ও ভাঙচুর শুরু করেছে। এতে কেউ পালিয়ে রক্ষা পাচ্ছে; আবার কারও স্থান হচ্ছে হাসপাতালে। গবাদিপশু লুটে নেওয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছে তার কর্মীরা। আমি আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

চাওড়া ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান বাদল বলেন, আমি ও আমার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুয়া ও ভিত্তিহীন। আমার কর্মীরা কোনো অন্যায় ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নয়। নির্বাচনে হেরে গিয়ে অ্যাডভোকেট মহসিন হাওলাদার আমার কর্মী-সমর্থকদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মান্নান বলেন, বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে ওঠবস করার ঘটনায় লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নই।

তিনি বলেন, চাওড়া ইউনিয়নের পরিস্থিতি শান্ত আছে। আমাদের পুলিশ সদস্যরা সেখানে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় আছে। এরপরও যদি কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তাহলে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

ট্যাগস :

নৌকার সমর্থন না করায় বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে ওঠবস

আপডেট সময় : ১০:২৩:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১

২৪ জুন ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করায় ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়েছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিরূপ মন্তব্য দেখা গেছে।

মঙ্গলবার (২২ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই বৃদ্ধের ঘর ভাঙচুরের করে অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুটসহ তার এক ছেলের স্ত্রী ও এক ভাইয়ের স্ত্রীকেও মারধর করা হয়।

ভুক্তভোগী কুদ্দুস হাওলাদার (৬৫) আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাতাকাটা গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

কুদ্দুস হাওলাদার বলেন, সোমবার (২১ জুন) আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মহসিন হাওলাদারকে সমর্থন করি। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীকে নির্বাচনে পরাজিত হন। আর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন নৌকার প্রার্থী মো. আখতারুজ্জামান খান বাদল।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আখতারুজ্জামান খান বাদলের কর্মী ও সমর্থক কাইউম হাওলাদারের ছেলে রাশেদুল, আমজাদ হাওলাদারের ছেলে মনিরুল, সোহেলের ছেলে মিরাজ ও নাসিরের ছেলে ইলিয়াসসহ অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন লোক আমাকে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যায়। এরপর তারা আমার ভাইয়ের স্ত্রী ও পুত্রবধূসহ নাতি-নাতনিদের সামনে আমাকে মারধর করে কান ধরিয়ে ওঠবস করায়। এতে আমার ছেলেবউ রুমানা ও ভাইয়ের বউ ফিরোজা বাধা দিলে তাদেরও মারধর করে তারা। পরে তারা ঘরের শোকেস ও আলমারি ভেঙে ১৮ হাজার টাকা ও লক্ষাধিক টাকার স্বর্ণালংকারও নিয়ে যায়।

পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট মহসিন হাওলাদার বলেন, নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী অংশ নেবে এবং জয়-পরাজয় থাকবে। তাই বলে পরাজিত প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের এভাবে লাঞ্ছিত করবে, মারধর করবে, বাড়িঘর ভাঙচুর করবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। বৃদ্ধ কুদ্দুস হাওলাদারের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে চরম লজ্জাজনক ও ন্যক্কারজনক ঘটনা। তাই আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আখতারুজ্জামান খান বাদল নিজের কর্মী ও সমর্থকদের দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা ও ভাঙচুর শুরু করেছে। এতে কেউ পালিয়ে রক্ষা পাচ্ছে; আবার কারও স্থান হচ্ছে হাসপাতালে। গবাদিপশু লুটে নেওয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছে তার কর্মীরা। আমি আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

চাওড়া ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান বাদল বলেন, আমি ও আমার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুয়া ও ভিত্তিহীন। আমার কর্মীরা কোনো অন্যায় ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নয়। নির্বাচনে হেরে গিয়ে অ্যাডভোকেট মহসিন হাওলাদার আমার কর্মী-সমর্থকদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মান্নান বলেন, বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে ওঠবস করার ঘটনায় লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নই।

তিনি বলেন, চাওড়া ইউনিয়নের পরিস্থিতি শান্ত আছে। আমাদের পুলিশ সদস্যরা সেখানে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় আছে। এরপরও যদি কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তাহলে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।