ঢাকা ১২:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিকিৎসা অবহেলায় মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ, লাশের ওপর কাঁদছে ১০ মাসের শিশু

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৭:০৪:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ জুলাই ২০২১ ১৮১ বার পড়া হয়েছে

০২ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও নার্সের অবহেলায় সুমী বেগম (২৪) নামের এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মা মারা যাওয়ার পর লাশের ওপর গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছিল দুগ্ধপোষ্য ১০ মাসের শিশু। শিশুটির কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বর।

বৃহস্পতিবার (০১ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। সুমী বেগম উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের মন্নান মিয়ার মেয়ে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের সরকারবাজার এলাকার এমরান মিয়ার স্ত্রী তিনি। চিকিৎসা অবহেলায় তার মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

স্বজনরা জানিয়েছেন, বুধবার (৩০ জুন) দুপুরে এক সন্তানের জননী সুমী বেগমের পেটব্যথা শুরু হলে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে মেডিক্যাল পরীক্ষা শেষ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি করলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এ সময় সুমীর মা রাহেনা বেগম ও বাবা মন্নান মিয়া দায়িত্বরত চিকিৎসক ও সিনিয়র নার্সদের কাছে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার রেফার্ড করতে বলেন। কিন্তু তাদের কথা শোনেননি চিকিৎসক ও নার্সরা। দুপুর ১২টার দিকে সুমীর শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হলে সিনিয়র নার্স অনিতা সিনহা ও মিডওয়াইফ রত্না মন্ডল ইনজেকশন পুশ করেন। এরপর সুমী নিস্তেজ হয়ে যান। তখন সুমীর বাবা দায়িত্বরত চিকিৎসক মুন্না সিনহা ও নার্সদের কাছে গেলে তারা জানান রোগী ঘুমিয়ে আছেন, বিরক্ত করবেন না। বিকাল পর্যন্ত সুমীর একই অবস্থা দেখে আবার চিকিৎসকের কাছে যান বাবা। সন্ধ্যায় চিকিৎসক মুন্না সিনহা এসে সুমীকে মৃত ঘোষণা করেন।

সুমীর মা রাহেনা বেগম বলেন, আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা দায়ী। আমি তাদের বিচার চাই। যেন চিকিৎসা অবহেলায় আর কোনও মায়ের বুক খালি না হয়।

তবে দায়িত্বরত চিকিৎসক মুন্না সিনহা বলেন, রোগীকে মৌলভীবাজার হাসপাতালে রেফার্ড করার কথা আমাদের বলেননি স্বজনরা। চিকিৎসাসেবায় আমাদের অবহেলা ছিল না। প্রয়োজনে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তবে রোগীর কেন মৃত্যু হয়েছে তা বলেননি এই চিকিৎসক।

কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা চিকিৎসক সাজেদুল কবির বলেন, কী কারণে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে; তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই ঘটনায় যদি কোনও চিকিৎসক ও নার্সের অবহেলা থাকে তাহলে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কারও অবহেলা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন চিকিৎসক চৌধুরী জালাল উদ্দিন মোর্শেদ বলেন, ওই নারীর মৃত্যুর ঘটনায় কারও গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

ট্যাগস :

চিকিৎসা অবহেলায় মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ, লাশের ওপর কাঁদছে ১০ মাসের শিশু

আপডেট সময় : ০৭:০৪:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ জুলাই ২০২১

০২ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও নার্সের অবহেলায় সুমী বেগম (২৪) নামের এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মা মারা যাওয়ার পর লাশের ওপর গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছিল দুগ্ধপোষ্য ১০ মাসের শিশু। শিশুটির কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বর।

বৃহস্পতিবার (০১ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। সুমী বেগম উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের মন্নান মিয়ার মেয়ে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের সরকারবাজার এলাকার এমরান মিয়ার স্ত্রী তিনি। চিকিৎসা অবহেলায় তার মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

স্বজনরা জানিয়েছেন, বুধবার (৩০ জুন) দুপুরে এক সন্তানের জননী সুমী বেগমের পেটব্যথা শুরু হলে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে মেডিক্যাল পরীক্ষা শেষ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি করলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এ সময় সুমীর মা রাহেনা বেগম ও বাবা মন্নান মিয়া দায়িত্বরত চিকিৎসক ও সিনিয়র নার্সদের কাছে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার রেফার্ড করতে বলেন। কিন্তু তাদের কথা শোনেননি চিকিৎসক ও নার্সরা। দুপুর ১২টার দিকে সুমীর শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হলে সিনিয়র নার্স অনিতা সিনহা ও মিডওয়াইফ রত্না মন্ডল ইনজেকশন পুশ করেন। এরপর সুমী নিস্তেজ হয়ে যান। তখন সুমীর বাবা দায়িত্বরত চিকিৎসক মুন্না সিনহা ও নার্সদের কাছে গেলে তারা জানান রোগী ঘুমিয়ে আছেন, বিরক্ত করবেন না। বিকাল পর্যন্ত সুমীর একই অবস্থা দেখে আবার চিকিৎসকের কাছে যান বাবা। সন্ধ্যায় চিকিৎসক মুন্না সিনহা এসে সুমীকে মৃত ঘোষণা করেন।

সুমীর মা রাহেনা বেগম বলেন, আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা দায়ী। আমি তাদের বিচার চাই। যেন চিকিৎসা অবহেলায় আর কোনও মায়ের বুক খালি না হয়।

তবে দায়িত্বরত চিকিৎসক মুন্না সিনহা বলেন, রোগীকে মৌলভীবাজার হাসপাতালে রেফার্ড করার কথা আমাদের বলেননি স্বজনরা। চিকিৎসাসেবায় আমাদের অবহেলা ছিল না। প্রয়োজনে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তবে রোগীর কেন মৃত্যু হয়েছে তা বলেননি এই চিকিৎসক।

কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা চিকিৎসক সাজেদুল কবির বলেন, কী কারণে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে; তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই ঘটনায় যদি কোনও চিকিৎসক ও নার্সের অবহেলা থাকে তাহলে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কারও অবহেলা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন চিকিৎসক চৌধুরী জালাল উদ্দিন মোর্শেদ বলেন, ওই নারীর মৃত্যুর ঘটনায় কারও গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।