ঢাকা ০৯:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মডেলকে কুমারীত্ব প্রমাণের পরীক্ষা দিতে বাধ্য করার অভিযোগ

বিনোদন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:০৭:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ জুলাই ২০২১ ১৮৯ বার পড়া হয়েছে

০৩ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে ইয়েমেনের একজন অভিনেত্রী ও মডেলকে “অশালীন আচরণ”এবং মাদক রাখার অভিযোগ তুলে মিথ্যা মামলা দিয়েছে দেশটির হুথি বিদ্রোহী কর্তৃপক্ষ।

বিশ বছর বয়সী ইনতিসার আল-হাম্মাদি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করছেন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানার কারাগারে তাকে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আটক রাখা হয়েছে।

হুথি বিদ্রোহীদের পরিচালিত জেলখানায় তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে এবং কারাগারের হাসপাতালে ইনতিসার আল-হাম্মাদিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

তার আইনজীবী অভিযোগ করেছেন ইনতিসার আল-হাম্মাদিকে যারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তারা তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে, তাকে বাক্যবাণে হয়রানি করেছে, বর্ণবাদী অপমানজনক কথাবার্তা বলেছে এবং চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে একটি নথি সই করতে বাধ্য করেছে।

কৌঁসুলিরা এমনকি তাকে “কুমারীত্বের পরীক্ষা” দিতে বাধ্য করার হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে।

তার আইনজীবী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন হাম্মাদির মামলার কাগজপত্র দেখতে তাকে বাধা দেয়া হয়েছে এবং এমাসের গোড়ার দিকে মিস হাম্মাদিকে দুবার যখন আদালতে হাজিরা দিতে হয়, তখন তার আইনজীবীকে আদালতে তার প্রতিনিধিত্ব করতে দেয়া হয়নি।

হুথি বিদ্রোহীরা ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তারা এই ঘটনা সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেনি।

হাম্মাদির বাবা ইয়েমেনি এবং মা ইথিওপিয়ান। তিনি চার বছর ধরে ইয়েমেনে মডেল হিসাবে কাজ করছেন। তিনি ইয়েমেনের দুটি টেলিভিশন সিরিজেও অভিনয় করেছেন

জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়

হাম্মাদি রক্ষণশীল মুসলিম সমাজের বিধি উপেক্ষা করে কখনও কখনও হিজাব ছাড়াই তার ছবি অনলাইনে পোস্ট করেছেন।

তার আইনজীবী বলেছেন হাম্মাদি বিশে ফেব্রুয়ারি সানায় আরো তিনজনের সাথে গাড়িতে যখন যাচ্ছিলেন, তখন হুথি বাহিনীর সদস্যরা গাড়িটি থামায় এবং সবাইকে গ্রেপ্তার করে।

হাম্মাদিকে চোখ বেঁধে ফৌজদারি তদন্তকারী সংস্থার একটি দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে ১০দিন আটকে রাখা হয়। সেসময় কারো সাথে তাকে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি বলে জানান তার আইনজীবী।

“তার ফোন জব্দ করা হয়, এবং তার মডেলিং-এর ফটোগুলোকে অশালীন কাজ বলে বিবেচনা করা হয়। সে কারণে তাদের (হুথি কর্তৃপক্ষের ) চোখে তিনি বেশ্যা বলে গণ্য হন,” মানবাধিকার সংগঠনকে জানান হাম্মাদির আইনজীবী।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, মে মাসের শেষ দিকে একদল মানবাধিকার কর্মী ও একজন আইনজীবী যাদের মিস হাম্মাদির সাথে জেলখানায় দেখা করার অনুমতি দেয়া হয়েছিলো, তারা বলেন যারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন, তারা মিস হাম্মাদিকে চোখ বাঁধা আবস্থায় একটি নথিতে সই করতে বাধ্য করেন।

ওই নথিটি ছিল কার্যত বেশ কিছু অপরাধের জন্য “স্বীকারোক্তি”।

‘বেশ্যা ও ক্রীতদাসী’

মার্চ মাসে মিস হাম্মাদিকে সানার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। তার আইনজীবী বলছেন, সেখানে কারারক্ষীরা তাকে “বেশ্যা” এবং “ক্রীতদাসী” বলে ডাকতো, কারণ তার মা ইথিওপিয়ান বলে মিস হাম্মাদির চামড়া কিছুটা কৃষ্ণবর্ণ। তাকে জোর করে “কুমারীত্ব পরীক্ষার” যে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছিল, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশানাল তার নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দেবার পর মে মাসের গোড়ায় কৌঁসুলিরা সেই পরিকল্পনা বাতিল করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে “কুমারীত্ব প্রমাণের পরীক্ষার” কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, এটা কোন নারী কুমারী বলে চিকিৎসাগত কোন ইঙ্গিত দেয় না এবং এটি মানবাধিকারের লংঘন।

“ইনতিসার আল-হাম্মাদির বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মামলা দায়ের, তাকে বিনা বিচারে গ্রেপ্তার, আটক অবস্থায় তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন থেকে এটা স্পষ্ট যে ইয়েমেনে কর্তৃপক্ষের হাতে নারীরা কীধরনের নির্যাতন ও অত্যাচারের শিকার হন,” বলছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্য প্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক মাইকেল পেজ।

তিনি বলছেন কর্তৃপক্ষের উচিত মিস হাম্মাদি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যে ভিত্তিহীন বলে দাবি করছেন সেটা প্রমাণের যে অধিকার তার আছে সে সুযোগ তাকে দেয়া। খবর: বিবিসি বাংলা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

ট্যাগস :

মডেলকে কুমারীত্ব প্রমাণের পরীক্ষা দিতে বাধ্য করার অভিযোগ

আপডেট সময় : ০৯:০৭:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ জুলাই ২০২১

০৩ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে ইয়েমেনের একজন অভিনেত্রী ও মডেলকে “অশালীন আচরণ”এবং মাদক রাখার অভিযোগ তুলে মিথ্যা মামলা দিয়েছে দেশটির হুথি বিদ্রোহী কর্তৃপক্ষ।

বিশ বছর বয়সী ইনতিসার আল-হাম্মাদি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করছেন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানার কারাগারে তাকে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আটক রাখা হয়েছে।

হুথি বিদ্রোহীদের পরিচালিত জেলখানায় তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে এবং কারাগারের হাসপাতালে ইনতিসার আল-হাম্মাদিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

তার আইনজীবী অভিযোগ করেছেন ইনতিসার আল-হাম্মাদিকে যারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তারা তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে, তাকে বাক্যবাণে হয়রানি করেছে, বর্ণবাদী অপমানজনক কথাবার্তা বলেছে এবং চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে একটি নথি সই করতে বাধ্য করেছে।

কৌঁসুলিরা এমনকি তাকে “কুমারীত্বের পরীক্ষা” দিতে বাধ্য করার হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে।

তার আইনজীবী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন হাম্মাদির মামলার কাগজপত্র দেখতে তাকে বাধা দেয়া হয়েছে এবং এমাসের গোড়ার দিকে মিস হাম্মাদিকে দুবার যখন আদালতে হাজিরা দিতে হয়, তখন তার আইনজীবীকে আদালতে তার প্রতিনিধিত্ব করতে দেয়া হয়নি।

হুথি বিদ্রোহীরা ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তারা এই ঘটনা সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেনি।

হাম্মাদির বাবা ইয়েমেনি এবং মা ইথিওপিয়ান। তিনি চার বছর ধরে ইয়েমেনে মডেল হিসাবে কাজ করছেন। তিনি ইয়েমেনের দুটি টেলিভিশন সিরিজেও অভিনয় করেছেন

জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়

হাম্মাদি রক্ষণশীল মুসলিম সমাজের বিধি উপেক্ষা করে কখনও কখনও হিজাব ছাড়াই তার ছবি অনলাইনে পোস্ট করেছেন।

তার আইনজীবী বলেছেন হাম্মাদি বিশে ফেব্রুয়ারি সানায় আরো তিনজনের সাথে গাড়িতে যখন যাচ্ছিলেন, তখন হুথি বাহিনীর সদস্যরা গাড়িটি থামায় এবং সবাইকে গ্রেপ্তার করে।

হাম্মাদিকে চোখ বেঁধে ফৌজদারি তদন্তকারী সংস্থার একটি দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে ১০দিন আটকে রাখা হয়। সেসময় কারো সাথে তাকে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি বলে জানান তার আইনজীবী।

“তার ফোন জব্দ করা হয়, এবং তার মডেলিং-এর ফটোগুলোকে অশালীন কাজ বলে বিবেচনা করা হয়। সে কারণে তাদের (হুথি কর্তৃপক্ষের ) চোখে তিনি বেশ্যা বলে গণ্য হন,” মানবাধিকার সংগঠনকে জানান হাম্মাদির আইনজীবী।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, মে মাসের শেষ দিকে একদল মানবাধিকার কর্মী ও একজন আইনজীবী যাদের মিস হাম্মাদির সাথে জেলখানায় দেখা করার অনুমতি দেয়া হয়েছিলো, তারা বলেন যারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন, তারা মিস হাম্মাদিকে চোখ বাঁধা আবস্থায় একটি নথিতে সই করতে বাধ্য করেন।

ওই নথিটি ছিল কার্যত বেশ কিছু অপরাধের জন্য “স্বীকারোক্তি”।

‘বেশ্যা ও ক্রীতদাসী’

মার্চ মাসে মিস হাম্মাদিকে সানার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। তার আইনজীবী বলছেন, সেখানে কারারক্ষীরা তাকে “বেশ্যা” এবং “ক্রীতদাসী” বলে ডাকতো, কারণ তার মা ইথিওপিয়ান বলে মিস হাম্মাদির চামড়া কিছুটা কৃষ্ণবর্ণ। তাকে জোর করে “কুমারীত্ব পরীক্ষার” যে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছিল, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশানাল তার নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দেবার পর মে মাসের গোড়ায় কৌঁসুলিরা সেই পরিকল্পনা বাতিল করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে “কুমারীত্ব প্রমাণের পরীক্ষার” কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, এটা কোন নারী কুমারী বলে চিকিৎসাগত কোন ইঙ্গিত দেয় না এবং এটি মানবাধিকারের লংঘন।

“ইনতিসার আল-হাম্মাদির বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মামলা দায়ের, তাকে বিনা বিচারে গ্রেপ্তার, আটক অবস্থায় তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন থেকে এটা স্পষ্ট যে ইয়েমেনে কর্তৃপক্ষের হাতে নারীরা কীধরনের নির্যাতন ও অত্যাচারের শিকার হন,” বলছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্য প্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক মাইকেল পেজ।

তিনি বলছেন কর্তৃপক্ষের উচিত মিস হাম্মাদি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যে ভিত্তিহীন বলে দাবি করছেন সেটা প্রমাণের যে অধিকার তার আছে সে সুযোগ তাকে দেয়া। খবর: বিবিসি বাংলা।