ঢাকা ০৮:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরেণ্য গীতিকার ফজল-এ-খোদা আর নেই

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০১:০০:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ জুলাই ২০২১ ১৬২ বার পড়া হয়েছে

০৪ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

’সালাম সালাম হাজার সালাম’ কালজয়ী এ গানের গীতিকার ফজল এ খোদা আর নেই।

রোববার (৪ জুলাই) ভোর ৪টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।

৮১ বছর বয়সী এই গীতিকার করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি তিন পুত্র, স্ত্রী ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাকে রায়ের বাজার কবরস্থানে দাফন করা হবে।

বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক এই গুণী মানুষটির জন্ম ১৯৪১ সালের ৯ মার্চ, পাবনার বেড়া থানার বনগ্রামে। বাবা মুহাম্মদ খোদা বক্স এবং মা মোসাম্মাৎ জয়নবুন্নেছার ঘরে জন্ম নেওয়া তাদের প্রথম সন্তান ফজল-এ-খোদা।

ফজল-এ-খোদা’র কর্মজীবন শুরু হয় বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসেবে ১৯৬৩ সাল থেকে। ১৯৬৪ সালে টেলিভিশনে তিনি তালিকাভুক্ত হন। শিশু কিশোর সংগঠন শাপলা শালুকের আসরের প্রতিষ্ঠাতা ফজল-এ-খোদা ‘মিতা ভাই’ নামেও পরিচিত।

তার লেখা বহুগান শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে। এর মধ্যে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ মুক্তিযুদ্ধে সাত কোটি মানুষকে উদ্দীপ্ত করে। ১৯৭১-এ অসহযোগ অন্দোলন চলাকালে তার লেখা গণসংগীত ‘সংগ্রাম, সংগ্রাম, সংগ্রাম চলবে, দিন রাত অবিরাম’ গানটি তৎকালীন টেলিভিশন প্রচার করে।

ফজল-এ-খোদা’র কালজয়ী অনেকগুলো গান এখনও মানুষকে আন্দোলিত করে। ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না’, ‘কলসি কাঁধে ঘাটে যায় কোন রূপসী’, বাসন্তী রং শাড়ি পরে কোন রমণী চলে যায়’, আমি প্রদীপের মতো রাত জেগে জেগে’, ‘প্রেমের এক নাম জীবন’, ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো, পথের ধুলোয় লুটোবে’ এমন অসংখ্য গানের রচয়িতা ফজল-এ-খোদার গানগুলো প্রয়াত বশীর আহমেদ, আবদুল জাব্বার, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, রথিন্দ্রনাথ রায়ের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের কণ্ঠে দর্শক শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেছে।

আজাদ রহমান, আবদুল আহাদ, ধীর আলী, সুবল দাস, কমল দাশ গুপ্ত, আবেদ হোসেন খান, অজিত রায়, দেবু ভট্টাচার্য, সত্য সাহা প্রমুখের মতো সঙ্গীতজ্ঞ ফজল-এ-খোদা’র গানগুলোতে সুর করেছেন। মূলত ছড়া দিয়ে তার লেখালেখি শুরু। তার ছড়াগ্রন্থের সংখ্যা ১০টি আর কবিতা গ্রন্থ ৫টি। এছাড়াও গান, নাটক, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে তার সর্বমোট বইয়ের সংখ্যা ৩৩টি। এ ছাড়াও সত্তর দশকে শিশু কিশোরদের মাসিক পত্রিকা ‘শাপলা শালুক’ ফজল-এ-খোদা’র নিপুণ সম্পদনায় প্রকাশিত হতো।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হলে ফজল-এ-খোদা তার দুঃখ এবং ক্ষোভ গানের মাধ্যমে প্রকাশ করেন, যা সেই সময়ের কল্পনাতীত ঘটনা। বশীর আহমদের সুরারোপে মোহাম্মদ আবদুল জাব্বারের গাওয়া ফজল-এ-খোদা’র সেই গানটি ছিল ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো/ পথের ধুলোয় লুটোবে/ সাত রঙে রাঙা স্বপ্ন-বিহংগ / সহসা পাখনা লুটোবে/ এমন তো কথা ছিলো না’। গানটি ১৯৭৬ সালে রেকর্ড ও বেতারে প্রচারিত হয়।

১৯৬০ দশক থেকে শুরু করে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫০ বছর ফজল-এ-খোদা অসংখ্য দেশাত্মবোধক, আধুনিক, লোক সংগীত, ইসলামী গান লিখেছেন। তার লেখা, মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের সুরারোপ করা ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি ২০০৬ সালে বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের সেরা ২০টি গানের তালিকায় ১২তম (দ্বাদশ) স্থান পায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

ট্যাগস :

বরেণ্য গীতিকার ফজল-এ-খোদা আর নেই

আপডেট সময় : ০১:০০:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ জুলাই ২০২১

০৪ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

’সালাম সালাম হাজার সালাম’ কালজয়ী এ গানের গীতিকার ফজল এ খোদা আর নেই।

রোববার (৪ জুলাই) ভোর ৪টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।

৮১ বছর বয়সী এই গীতিকার করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি তিন পুত্র, স্ত্রী ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাকে রায়ের বাজার কবরস্থানে দাফন করা হবে।

বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক এই গুণী মানুষটির জন্ম ১৯৪১ সালের ৯ মার্চ, পাবনার বেড়া থানার বনগ্রামে। বাবা মুহাম্মদ খোদা বক্স এবং মা মোসাম্মাৎ জয়নবুন্নেছার ঘরে জন্ম নেওয়া তাদের প্রথম সন্তান ফজল-এ-খোদা।

ফজল-এ-খোদা’র কর্মজীবন শুরু হয় বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসেবে ১৯৬৩ সাল থেকে। ১৯৬৪ সালে টেলিভিশনে তিনি তালিকাভুক্ত হন। শিশু কিশোর সংগঠন শাপলা শালুকের আসরের প্রতিষ্ঠাতা ফজল-এ-খোদা ‘মিতা ভাই’ নামেও পরিচিত।

তার লেখা বহুগান শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে। এর মধ্যে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ মুক্তিযুদ্ধে সাত কোটি মানুষকে উদ্দীপ্ত করে। ১৯৭১-এ অসহযোগ অন্দোলন চলাকালে তার লেখা গণসংগীত ‘সংগ্রাম, সংগ্রাম, সংগ্রাম চলবে, দিন রাত অবিরাম’ গানটি তৎকালীন টেলিভিশন প্রচার করে।

ফজল-এ-খোদা’র কালজয়ী অনেকগুলো গান এখনও মানুষকে আন্দোলিত করে। ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না’, ‘কলসি কাঁধে ঘাটে যায় কোন রূপসী’, বাসন্তী রং শাড়ি পরে কোন রমণী চলে যায়’, আমি প্রদীপের মতো রাত জেগে জেগে’, ‘প্রেমের এক নাম জীবন’, ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো, পথের ধুলোয় লুটোবে’ এমন অসংখ্য গানের রচয়িতা ফজল-এ-খোদার গানগুলো প্রয়াত বশীর আহমেদ, আবদুল জাব্বার, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, রথিন্দ্রনাথ রায়ের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের কণ্ঠে দর্শক শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেছে।

আজাদ রহমান, আবদুল আহাদ, ধীর আলী, সুবল দাস, কমল দাশ গুপ্ত, আবেদ হোসেন খান, অজিত রায়, দেবু ভট্টাচার্য, সত্য সাহা প্রমুখের মতো সঙ্গীতজ্ঞ ফজল-এ-খোদা’র গানগুলোতে সুর করেছেন। মূলত ছড়া দিয়ে তার লেখালেখি শুরু। তার ছড়াগ্রন্থের সংখ্যা ১০টি আর কবিতা গ্রন্থ ৫টি। এছাড়াও গান, নাটক, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে তার সর্বমোট বইয়ের সংখ্যা ৩৩টি। এ ছাড়াও সত্তর দশকে শিশু কিশোরদের মাসিক পত্রিকা ‘শাপলা শালুক’ ফজল-এ-খোদা’র নিপুণ সম্পদনায় প্রকাশিত হতো।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হলে ফজল-এ-খোদা তার দুঃখ এবং ক্ষোভ গানের মাধ্যমে প্রকাশ করেন, যা সেই সময়ের কল্পনাতীত ঘটনা। বশীর আহমদের সুরারোপে মোহাম্মদ আবদুল জাব্বারের গাওয়া ফজল-এ-খোদা’র সেই গানটি ছিল ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো/ পথের ধুলোয় লুটোবে/ সাত রঙে রাঙা স্বপ্ন-বিহংগ / সহসা পাখনা লুটোবে/ এমন তো কথা ছিলো না’। গানটি ১৯৭৬ সালে রেকর্ড ও বেতারে প্রচারিত হয়।

১৯৬০ দশক থেকে শুরু করে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫০ বছর ফজল-এ-খোদা অসংখ্য দেশাত্মবোধক, আধুনিক, লোক সংগীত, ইসলামী গান লিখেছেন। তার লেখা, মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের সুরারোপ করা ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি ২০০৬ সালে বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের সেরা ২০টি গানের তালিকায় ১২তম (দ্বাদশ) স্থান পায়।