ঢাকা ১২:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জে জানাজার সময় নড়ে উঠলেন ‘মৃত’ ব্যক্তি

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ১০:৩৩:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১ ১৯৯ বার পড়া হয়েছে

০৮ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

আব্দুল হাফিজ (৩৮)। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জামলাবাজ গ্রামের মৃত মালদার আলীর ছেলে। বৃহস্পতিবার সকালে ধান মাপতে গিয়ে বুকে ব্যাথা অনুভব করেন তিনি। এরপর স্থানীয় বাজারে একজন পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিলে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তখন হাফিজের হৃৎস্পন্দ কাজ করছিল না। তাই অনেকক্ষণ পরীক্ষা করে হাফিজকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এরপর দিনব্যাপী তাকে শেষ বিদায়ের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে পরিবার। তার জানাজার নামাজের সময় নির্ধারণ করা হয় আসর নামাজের পর।

অবিশ্বাস্য এক ঘটনা ঘটে জানাজা নামাজের সময়। স্থানীয় মসজিদের মাঠে জানাজার সময় অনেকেই শেষ বারের মত আব্দুল হাফিজকে দেখতে চান। মুখের ওপরের কাপড় সরানোর পর দেখা যায় তার মুখ দিয়ে লালা ঝরছে। শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন তিনি। পরে তাকে দ্রুত স্থানীয় নোয়াখালী বাজারের একটি ফার্সেমেসিতে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক জানান, ওই ব্যক্তি মৃত। পরে রাতে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

জানাজায় উপস্থিত জামলাবাজ গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আব্দুল হাফিজ পেশায় ধান ব্যবসায়ী ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে আব্দুল হাফিজ ধান ওজন করতে গেলে বুকে ব্যথা অনুভব হয়। পরে তাকে পরিবারের লোকজন স্থানীয় নোয়াখালী বাজারে নিয়ে গেলে পল্লীচিকিৎসক তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে তার দাফনের প্রস্তুতি নেয়া হয। আসরের নামাজের পর গ্রামের ঈদগাহে জানাজার নামাজ শেষে তার দাফন সম্পন্ন হওয়ার কথ ছিল।

নামাজ শুরুর আগে মুসল্লিরা মরদেহ দেখেন। তখন একজন বলেন, মরদেহের মুখ থেকে লালা পড়ছে। তার শ্বাস আছে। পরে তাকে দ্রুত স্থানীয় নোয়াখালী বাজারের একটি ফার্মেসিতে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, হাফিজ মৃত। পরে মরদেহ আবার গ্রামে এনে রাতে দাফন করা হয়।

জামলাবাজ গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য মহিম আহমদ জানান, তিনি জানাজার নামাজে ছিলেন। তবে হাফিজের জীবিত থাকা ও শ্বাস নেয়ার বিষয়টি তিনি নিজে দেখেননি।

তিনি বলেন, অনেকেই বিষয়টি দেখেছেন বলে জানান। এ কারণে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। পরে ডাক্তার মৃত বলায় রাতে গ্রামে এনে তাকে দাফন করা হয়।

জামলাবাজ গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন জানান, আব্দুল হাফিজ (৩৮) পেশায় একজন ধান ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় তিনি জামলাবাজ গ্রামে ধান কিনছিলেন। এ সময় পাল্লা দিয়ে ধান ওজনকালে তার বুকে ব্যথা অনুভব হয়। তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারের লোকজন স্থানীয় নোয়াখালী বাজারে নিয়ে গেলে পল্লী চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। বিকেলে স্বজনরা গ্রামের মসজিদের মাঠে জানাজার আয়োজন করে। এ সময় তিনি নড়েচড়ে উঠলে হইচই শুরু হয়।

তিনি জানান, জানাজার আগে এলাকার মানুষজন তাকে শেষবার দেখতে চাইলে কাফন সরিয়ে মুখ খোলার পর দেখেন, মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক আছে। তখনই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা।

নোয়াখালি বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও জামলাবাদ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল বাছিত সুজন বলেন, সকালে আমাদের বাজারের এক চিকিৎসক ওই ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন। বিকেলে জানাজার আগে তাকে শেষ দেখা দেখতে গিয়ে দেখা যায় তিনি জীবিত। পরে জরুরি ভিত্তিতে তাকে সুনামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার সৈকত দাশ বলেন, আমাদের কাছে ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

ট্যাগস :

সুনামগঞ্জে জানাজার সময় নড়ে উঠলেন ‘মৃত’ ব্যক্তি

আপডেট সময় : ১০:৩৩:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১

০৮ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

আব্দুল হাফিজ (৩৮)। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জামলাবাজ গ্রামের মৃত মালদার আলীর ছেলে। বৃহস্পতিবার সকালে ধান মাপতে গিয়ে বুকে ব্যাথা অনুভব করেন তিনি। এরপর স্থানীয় বাজারে একজন পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিলে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তখন হাফিজের হৃৎস্পন্দ কাজ করছিল না। তাই অনেকক্ষণ পরীক্ষা করে হাফিজকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এরপর দিনব্যাপী তাকে শেষ বিদায়ের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে পরিবার। তার জানাজার নামাজের সময় নির্ধারণ করা হয় আসর নামাজের পর।

অবিশ্বাস্য এক ঘটনা ঘটে জানাজা নামাজের সময়। স্থানীয় মসজিদের মাঠে জানাজার সময় অনেকেই শেষ বারের মত আব্দুল হাফিজকে দেখতে চান। মুখের ওপরের কাপড় সরানোর পর দেখা যায় তার মুখ দিয়ে লালা ঝরছে। শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন তিনি। পরে তাকে দ্রুত স্থানীয় নোয়াখালী বাজারের একটি ফার্সেমেসিতে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক জানান, ওই ব্যক্তি মৃত। পরে রাতে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

জানাজায় উপস্থিত জামলাবাজ গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আব্দুল হাফিজ পেশায় ধান ব্যবসায়ী ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে আব্দুল হাফিজ ধান ওজন করতে গেলে বুকে ব্যথা অনুভব হয়। পরে তাকে পরিবারের লোকজন স্থানীয় নোয়াখালী বাজারে নিয়ে গেলে পল্লীচিকিৎসক তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে তার দাফনের প্রস্তুতি নেয়া হয। আসরের নামাজের পর গ্রামের ঈদগাহে জানাজার নামাজ শেষে তার দাফন সম্পন্ন হওয়ার কথ ছিল।

নামাজ শুরুর আগে মুসল্লিরা মরদেহ দেখেন। তখন একজন বলেন, মরদেহের মুখ থেকে লালা পড়ছে। তার শ্বাস আছে। পরে তাকে দ্রুত স্থানীয় নোয়াখালী বাজারের একটি ফার্মেসিতে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, হাফিজ মৃত। পরে মরদেহ আবার গ্রামে এনে রাতে দাফন করা হয়।

জামলাবাজ গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য মহিম আহমদ জানান, তিনি জানাজার নামাজে ছিলেন। তবে হাফিজের জীবিত থাকা ও শ্বাস নেয়ার বিষয়টি তিনি নিজে দেখেননি।

তিনি বলেন, অনেকেই বিষয়টি দেখেছেন বলে জানান। এ কারণে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। পরে ডাক্তার মৃত বলায় রাতে গ্রামে এনে তাকে দাফন করা হয়।

জামলাবাজ গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন জানান, আব্দুল হাফিজ (৩৮) পেশায় একজন ধান ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় তিনি জামলাবাজ গ্রামে ধান কিনছিলেন। এ সময় পাল্লা দিয়ে ধান ওজনকালে তার বুকে ব্যথা অনুভব হয়। তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারের লোকজন স্থানীয় নোয়াখালী বাজারে নিয়ে গেলে পল্লী চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। বিকেলে স্বজনরা গ্রামের মসজিদের মাঠে জানাজার আয়োজন করে। এ সময় তিনি নড়েচড়ে উঠলে হইচই শুরু হয়।

তিনি জানান, জানাজার আগে এলাকার মানুষজন তাকে শেষবার দেখতে চাইলে কাফন সরিয়ে মুখ খোলার পর দেখেন, মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক আছে। তখনই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা।

নোয়াখালি বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও জামলাবাদ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল বাছিত সুজন বলেন, সকালে আমাদের বাজারের এক চিকিৎসক ওই ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন। বিকেলে জানাজার আগে তাকে শেষ দেখা দেখতে গিয়ে দেখা যায় তিনি জীবিত। পরে জরুরি ভিত্তিতে তাকে সুনামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার সৈকত দাশ বলেন, আমাদের কাছে ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল।