ঢাকা ০৫:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অগ্নিকাণ্ডের দায় কি আমার? প্রশ্ন সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যানের

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ১০:০৪:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১ ২১২ বার পড়া হয়েছে

০৯ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৫৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় কারখানাটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেছেন, শ্রমিকদের অবহেলার কারণেও আগুন লাগতে পারে।

সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, জীবনে বড় ভুল করেছি ইন্ডাস্ট্রি করে। ইন্ডাস্ট্রি করলে শ্রমিক থাকবে। শ্রমিক থাকলে কাজ হবে। কাজ হলে আগুন লাগতেই পারে। এর দায় কি আমার?

শুক্রবার দুপুরে তার কারখানায় আগুন লেগে শ্রমিকদের মৃত্যুর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবুল হাসেম এসব বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি তো আর যেয়ে আগুন লাগিয়ে দেইনি। অথবা আমার কোনো ম্যানেজার আগুন লাগায়নি। শ্রমিকদের অবহেলার কারণেও আগুন লাগতে পারে। এখন যারা বিক্ষোভ করছে, তারা কেউ শ্রমিক না। তারা বহিরাগত।’

মোহাম্মদ আবুল হাসেম আরো বলেন, ‘এখানে সাতটি ভবনে কাজ হয়, কিন্তু আগুন লেগেছে মাত্র একটিতে। পুরো ফ্যাক্টরিতে ৬০০-৭০০ শ্রমিক কাজ করে।’

আগুন লাগার সময় ওই ভবনে কতজন কাজ করছিল জানতে চাইলে সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘সেটা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব না। কারণ অনেকগুলো ইউনিট বন্ধ ছিল।’

আগুন লাগার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু নিচের তলায় কার্টুন রাখা ছিল এবং বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ ছিল, তাই হয়তো আগুনের এই ভয়াবহতা। নিচের তলার কার্টুন থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে। ওপরের তলাগুলোতে বিভিন্ন মেশিন ও যন্ত্রপাতি ছিল। যেহেতু খাবারের আইটেম তৈরি হয়, তাই বহু ধরনের দাহ্য পদার্থ ছিল। সেটা হয়তো আগুনের ব্যাপকতা বাড়িয়েছে।’

কারখানায় আগুন লেগে হতাহতের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, ‘আমি যাইনি, তবে আমার লোকজন সেখানে আছে। যারা মারা গেছেন, তারা তো আমারই ছেলে-মেয়ে। আমি খুব ভেঙে পড়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমার ছেলে-মেয়েদের পাশে থাকতে। এটা একটা দুর্ঘটনা। ফ্যাক্টরির সবগুলো ইউনিট চালু ছিল না। লোকজন কম ছিল। তারপরেও যারা ছিল, তারা সবাই চেষ্টা করেছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কিন্তু পারেনি।’

ভবনটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ছিল বলেও দাবি করেছেন তিনি।

আবুল হাসেম বলেন, এই দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা খরচ আমরা বহন করবো। আর নিহতদের দাফন কাফনের ব্যবস্থাও আমরাই করবো। শ্রমিকদের যেসব সদস্য এই আগুনে মারা গেছেন, তাদের পরিবারকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায় তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ ঘটনায় দায় কে নেবে এমন প্রশ্নের জবাবে সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘দায় আমাকে নিতে হবে। কারণ, আমি ইন্ডাস্ট্রি করেছি। তবে কী কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তা আমি নিজেও জানি না।’ তিনি বলেন, ‘কেউ ইচ্ছা করে নিজের প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগায় না। যারা মারা গেছেন তারা আমার সন্তানের মতো। পরিবারের সদস্যদের মতো। নিজের পরিবারের সদস্যদের কেউ কখনও হত্যা করে না। কোনও কোনও গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, আগুন লাগার পরও শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এটি একটি মিথ্যাচার। নিচে আগুন লাগার কারণে হয়তো শ্রমিকরা নামতে পারেনি। সেই কারণেই ক্ষতি হয়েছে বেশি।’

তিনি বলেন, ‘জীবনে বড় ভুল করেছি ইন্ডাস্ট্রি করে। ইন্ডাস্ট্রি করলে শ্রমিক থাকবে। শ্রমিক থাকলে কাজ হবে। কাজ হলে আগুন লাগতেই পারে। এখন যেহেতু ক্ষতি হয়ে গেছে, আমরা কথা দিচ্ছি, সব ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের পাশে থাকবো। যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের চাকরির ব্যবস্থা করবো। আর যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার দায় বা খরচ আমরা বহন করবো।’

বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের চেষ্টায় ১৬ ঘণ্টা পরও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।

ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কমপক্ষে ৫৫ জন নিহত হয়েছে। শ্রমিক নিহত এবং আগুন নেভাতে দেরির ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার আনসার ক্যাম্পে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। তারা সংরক্ষণাগার থেকে তিনটি শটগান লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছে আনসার কর্তৃপক্ষ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

ট্যাগস :

অগ্নিকাণ্ডের দায় কি আমার? প্রশ্ন সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যানের

আপডেট সময় : ১০:০৪:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১

০৯ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৫৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় কারখানাটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেছেন, শ্রমিকদের অবহেলার কারণেও আগুন লাগতে পারে।

সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, জীবনে বড় ভুল করেছি ইন্ডাস্ট্রি করে। ইন্ডাস্ট্রি করলে শ্রমিক থাকবে। শ্রমিক থাকলে কাজ হবে। কাজ হলে আগুন লাগতেই পারে। এর দায় কি আমার?

শুক্রবার দুপুরে তার কারখানায় আগুন লেগে শ্রমিকদের মৃত্যুর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবুল হাসেম এসব বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি তো আর যেয়ে আগুন লাগিয়ে দেইনি। অথবা আমার কোনো ম্যানেজার আগুন লাগায়নি। শ্রমিকদের অবহেলার কারণেও আগুন লাগতে পারে। এখন যারা বিক্ষোভ করছে, তারা কেউ শ্রমিক না। তারা বহিরাগত।’

মোহাম্মদ আবুল হাসেম আরো বলেন, ‘এখানে সাতটি ভবনে কাজ হয়, কিন্তু আগুন লেগেছে মাত্র একটিতে। পুরো ফ্যাক্টরিতে ৬০০-৭০০ শ্রমিক কাজ করে।’

আগুন লাগার সময় ওই ভবনে কতজন কাজ করছিল জানতে চাইলে সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘সেটা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব না। কারণ অনেকগুলো ইউনিট বন্ধ ছিল।’

আগুন লাগার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু নিচের তলায় কার্টুন রাখা ছিল এবং বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ ছিল, তাই হয়তো আগুনের এই ভয়াবহতা। নিচের তলার কার্টুন থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে। ওপরের তলাগুলোতে বিভিন্ন মেশিন ও যন্ত্রপাতি ছিল। যেহেতু খাবারের আইটেম তৈরি হয়, তাই বহু ধরনের দাহ্য পদার্থ ছিল। সেটা হয়তো আগুনের ব্যাপকতা বাড়িয়েছে।’

কারখানায় আগুন লেগে হতাহতের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, ‘আমি যাইনি, তবে আমার লোকজন সেখানে আছে। যারা মারা গেছেন, তারা তো আমারই ছেলে-মেয়ে। আমি খুব ভেঙে পড়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমার ছেলে-মেয়েদের পাশে থাকতে। এটা একটা দুর্ঘটনা। ফ্যাক্টরির সবগুলো ইউনিট চালু ছিল না। লোকজন কম ছিল। তারপরেও যারা ছিল, তারা সবাই চেষ্টা করেছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কিন্তু পারেনি।’

ভবনটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ছিল বলেও দাবি করেছেন তিনি।

আবুল হাসেম বলেন, এই দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা খরচ আমরা বহন করবো। আর নিহতদের দাফন কাফনের ব্যবস্থাও আমরাই করবো। শ্রমিকদের যেসব সদস্য এই আগুনে মারা গেছেন, তাদের পরিবারকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায় তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ ঘটনায় দায় কে নেবে এমন প্রশ্নের জবাবে সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘দায় আমাকে নিতে হবে। কারণ, আমি ইন্ডাস্ট্রি করেছি। তবে কী কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তা আমি নিজেও জানি না।’ তিনি বলেন, ‘কেউ ইচ্ছা করে নিজের প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগায় না। যারা মারা গেছেন তারা আমার সন্তানের মতো। পরিবারের সদস্যদের মতো। নিজের পরিবারের সদস্যদের কেউ কখনও হত্যা করে না। কোনও কোনও গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, আগুন লাগার পরও শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এটি একটি মিথ্যাচার। নিচে আগুন লাগার কারণে হয়তো শ্রমিকরা নামতে পারেনি। সেই কারণেই ক্ষতি হয়েছে বেশি।’

তিনি বলেন, ‘জীবনে বড় ভুল করেছি ইন্ডাস্ট্রি করে। ইন্ডাস্ট্রি করলে শ্রমিক থাকবে। শ্রমিক থাকলে কাজ হবে। কাজ হলে আগুন লাগতেই পারে। এখন যেহেতু ক্ষতি হয়ে গেছে, আমরা কথা দিচ্ছি, সব ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের পাশে থাকবো। যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের চাকরির ব্যবস্থা করবো। আর যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার দায় বা খরচ আমরা বহন করবো।’

বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের চেষ্টায় ১৬ ঘণ্টা পরও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।

ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কমপক্ষে ৫৫ জন নিহত হয়েছে। শ্রমিক নিহত এবং আগুন নেভাতে দেরির ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার আনসার ক্যাম্পে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। তারা সংরক্ষণাগার থেকে তিনটি শটগান লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছে আনসার কর্তৃপক্ষ।