ঢাকা ০৭:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছেলেকে ২ ঘণ্টা আটকে রাখলো পুলিশ, অক্সিজেনের অভাবে বাবার মৃত্যু

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ১০:১২:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১ ২০৪ বার পড়া হয়েছে

০৮ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

অসুস্থ বৃদ্ধ পিতার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ছেলে ওলিউল ইসলাম। পথিমধ্যে সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা হাটের মোড়ে পুলিশ ছেলেকে দু’ঘণ্টা আটকে রাখায় অক্সিজেনের অভাবে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) এ ঘটনা ঘটে।

করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়াা ওই বৃদ্ধের নাম মো. রজব আলী মোড়ল (৬৫)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা।

বৃদ্ধের ছেলে ওলিউল ইসলাম জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধ পিতা। জরুরি অক্সিজেন প্রয়োজন। সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আল ফেরদৌস আলফা’র কাছ থেকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিলাম।

বেলা দশটার দিকে ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে তাকে আটক করেন ইটাগাছা ফাঁড়ির এএসআই সুভাষচন্দ্র। লকডাউনে বাইরে বের হওয়ায় তার কাছে এক হাজার টাকা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় তাকে দুই ঘন্টা সেখানে আটকে রাখা হয়। পরে ইটাগাছা এলাকার জনৈক জিয়াউল ইসলামের মধ্যস্থতায় ২০০ টাকা নিয়ে এএসআই সুভাষচন্দ্র তাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাড়িতে গিয়ে দেখি অক্সিজেনের অভাবে আমার পিতা মারা গেছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, যদি সময় মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারতাম তাহলে হয়তো আমার পিতাকে বাঁচানো যেতো।

তিনি এই অমানবিক ঘটনার বিচার দাবি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটাগাছা পুলিশ ফাড়ির একাধিক পুলিশ সদস্য বলেন, এএসআই সুভাষের কারণে পুলিশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এলাকার যত জমা-জমির ঝামেলা আছে সেগুলোর মধ্যে সে মাথা দেয়। অনেকে তাকে ল্যান্ড সুভাষ নামে চেনেন।

জানতে চাইলে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র বলেন, একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দ্রুত গতিতে ওই ব্যক্তি মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। আমি তাকে থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলাম। কাগজ দেখাতে না পারায় তার গাড়িটি আটক করে রেখে তাকে অন্য একটি ইজিবাইকে সিলিন্ডার নিয়ে চলে যেতে বলেছিলাম কিন্তু সে মোটরসাইকেল না নিয়ে যেতে রাজি হয়নি। বিষয়টি ট্রাফিক ইন্সপেক্টরকে জানালে তিনি মোটরসাইকেলটি ছেড়ে দিতে বলেন। এরমধ্যে সামান্য সময় দেরি হয়েছে। পরে শুনলাম তার বাবা মারা গেছেন। এটি দুর্ঘটনাবশত হয়ে গেছে।

নিউজটি না অনুরোধ জানিয়ে এবারের মতো তাকে মাফ করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি দেলোয়ার হুসেন কিছুই জানেন না উল্লেখ করে বলেন, ঘটনা সম্পর্কে আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সজিব খান বলেন, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। অভিযুক্ত এএসআই সুভাষ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

ট্যাগস :

ছেলেকে ২ ঘণ্টা আটকে রাখলো পুলিশ, অক্সিজেনের অভাবে বাবার মৃত্যু

আপডেট সময় : ১০:১২:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১

০৮ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

অসুস্থ বৃদ্ধ পিতার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ছেলে ওলিউল ইসলাম। পথিমধ্যে সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা হাটের মোড়ে পুলিশ ছেলেকে দু’ঘণ্টা আটকে রাখায় অক্সিজেনের অভাবে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) এ ঘটনা ঘটে।

করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়াা ওই বৃদ্ধের নাম মো. রজব আলী মোড়ল (৬৫)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা।

বৃদ্ধের ছেলে ওলিউল ইসলাম জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধ পিতা। জরুরি অক্সিজেন প্রয়োজন। সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আল ফেরদৌস আলফা’র কাছ থেকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিলাম।

বেলা দশটার দিকে ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে তাকে আটক করেন ইটাগাছা ফাঁড়ির এএসআই সুভাষচন্দ্র। লকডাউনে বাইরে বের হওয়ায় তার কাছে এক হাজার টাকা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় তাকে দুই ঘন্টা সেখানে আটকে রাখা হয়। পরে ইটাগাছা এলাকার জনৈক জিয়াউল ইসলামের মধ্যস্থতায় ২০০ টাকা নিয়ে এএসআই সুভাষচন্দ্র তাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাড়িতে গিয়ে দেখি অক্সিজেনের অভাবে আমার পিতা মারা গেছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, যদি সময় মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারতাম তাহলে হয়তো আমার পিতাকে বাঁচানো যেতো।

তিনি এই অমানবিক ঘটনার বিচার দাবি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটাগাছা পুলিশ ফাড়ির একাধিক পুলিশ সদস্য বলেন, এএসআই সুভাষের কারণে পুলিশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এলাকার যত জমা-জমির ঝামেলা আছে সেগুলোর মধ্যে সে মাথা দেয়। অনেকে তাকে ল্যান্ড সুভাষ নামে চেনেন।

জানতে চাইলে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র বলেন, একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দ্রুত গতিতে ওই ব্যক্তি মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। আমি তাকে থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলাম। কাগজ দেখাতে না পারায় তার গাড়িটি আটক করে রেখে তাকে অন্য একটি ইজিবাইকে সিলিন্ডার নিয়ে চলে যেতে বলেছিলাম কিন্তু সে মোটরসাইকেল না নিয়ে যেতে রাজি হয়নি। বিষয়টি ট্রাফিক ইন্সপেক্টরকে জানালে তিনি মোটরসাইকেলটি ছেড়ে দিতে বলেন। এরমধ্যে সামান্য সময় দেরি হয়েছে। পরে শুনলাম তার বাবা মারা গেছেন। এটি দুর্ঘটনাবশত হয়ে গেছে।

নিউজটি না অনুরোধ জানিয়ে এবারের মতো তাকে মাফ করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি দেলোয়ার হুসেন কিছুই জানেন না উল্লেখ করে বলেন, ঘটনা সম্পর্কে আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সজিব খান বলেন, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। অভিযুক্ত এএসআই সুভাষ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।